– হরবিলাস সরকার
মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি
বস্তুকণার মধ্যে প্রেম আছে। তা নাহলে চাঁদ, পৃথিবীর মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক কেন ? সূর্য আর গ্রহদের মধ্যে এত অবিচ্ছিন্ন টান কেন ? নীহারিকা, ছায়াপথ সকলেই বন্ধনে জড়িয়ে
আছে। কালের পরিবর্তনে নীহারিকা, ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহদের মৃত্যু
ঘটবে,
আবার নতুন করে নতুন রূপে নতুন অবস্থানে তাঁদের জন্ম হবে।
তবুও এই বন্ধন চিরন্তন ।
অদৃশ্য এই বন্ধনের কোন স্বরূপ নেই, শুধু অনুভব করা যায় দূর থেকে হৃদয়ের অন্তস্থলে। আবার দূরে আছে বলেই তাঁদের এত সৌন্দর্য। প্রেম
থাকে নিষ্পাপ ।
পৃথিবীর মাটি থেকে চাঁদকে দেখো, কাছে যেওনা। তাঁর সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। জোৎস্না বিলীন হয়ে যাবে। তাঁর ক্ষত-বিক্ষত দেহ তোমাকে
ঘৃণায় ভরিয়ে তুলবে। চাঁদের বুড়ির সুতো কাটা, আরো কতনা রূপকথার গল্প মন থেকে মুছে
যাবে ।
ফুল সুন্দর। তাঁর বৃন্তকে ছিঁড়োনা, পাঁপড়িগুলো দলোনা, মলিন হয়ে যাবে। রেনুর সুবাস বিশ্রী গন্ধ ছড়াবে। দেখতো, ভ্রমর, অলি, প্রজাপতিরা কেমনে তাদের স্নিগ্ধ পরশ বিলায় পাঁপড়ির গায়ে।
ফুলেরা তখন হেসে ওঠে অনাবিল আনন্দে ।
বিপুলা এই পৃথিবীর মাধুরি
মুগ্ধ করে আমাদের। তাঁর উজাড় করা স্নেহ-মমতা-ভালোবাসার টান আমরা উপেক্ষা করতে
পারিনা। নীলাকাশতলে প্রকৃতি তাঁর সহস্র সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে রেখেছে অকৃপণ
হস্তে। আর আমরা বিনিময়ে কী দিয়েছি তাকে? দিইনি, শুধুই নিয়েছি। তাঁর পিঞ্জর খুঁড়ে
আমরা আমাদের রসদ জুগিয়েছি, প্রাসাদ
বানিয়েছি, জীবন উপভোগের যাবতীয় যা কিছু
সবই করেছি। তাঁর জঠর চিরে মণি-মাণিক্য
তুলে নিয়েছি। আমাদের গগনচুম্বী সুখের ঘরে পড়েছে কি কখনো পৃথিবীর স্বস্তির
নিশ্বাস? না, বরং শুনেছি তাঁর ক্রন্দনধ্বনি। আমরা অরণ্যকে ধ্বংস করে নগর
গড়েছি,
সভ্যতার বিজয়রথে চড়ে নিলিমার নীল মুছে কালিমালিপ্ত করেছি।
শুধুই ব্যথা দিয়েছি, ভালোবাসিনি।
বালির চরে হারিয়ে গেছে তাই আজ স্রোতস্বিনীর কলতান। নেই আজ শীতের কুয়াশামাখানো
ভোরের সূর্যের ঝিকিমিকি, শরতের আকাশে
সাদা মেঘেদের আড়ালে চাঁদের লুকোচুরি খেলা। নেই বসন্তের শিহরণ জাগানো দক্ষিণা
বাতাস আর কোকিলের মন ভুলানো গান ।
বন্ধু, ভালবেসেছো যাকে, সেই যে তোমার প্রেয়সি অথবা প্রাণপ্রিয়, হৃদয় কি দিয়েছো তাকে না তুমি পেয়েছো তার হৃদয়? হৃদয়ের সন্ধান না করে দেহের প্রতি আকাঙ্ক্ষা জাগালে প্রেম
মরে যাবে কলঙ্কের ভারে ।
একই কক্ষপথে একই অবস্থানে
একের বেশি গ্রহের আসা সম্ভব নয়। যদি কখনো আসে, মনে রেখো – মহাপ্রলয় অনিবার্য। মানুষের জীবন আকাশেও একজনকে
কেন্দ্র করে একই বৃত্তে একই সময়ে একের অধিকজনের
আগমন, সেওতো মহাপ্রলয় ডেকে আনবে। দুটি
প্রবহমান জীবন-নদীর মাঝে যদি অন্য কেউ এসে পড়ে, আমরা যাকে পরকীয়া বলি, তার ফলও সমাজে
মহা অশুভ। এমন পরাগ-মিলন কখনো স্নিগ্ধ পরশ
হতে পারে না। এ হল ব্যভিচার, এক সামাজিক
ব্যাধি এবং এই ব্যাধি যেভাবে আজ সংক্রমিত হচ্ছে এবং সিনেমা, ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রেরণা দেওয়া হচ্ছে আর
সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে উৎসাহ প্রদান করছে তাতে তা দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে , অপসংস্কৃতির জোয়ারে যথার্থ প্রেমের সলিল সমাধি হচ্ছে। আর এভাবেই মানুষের পৃথিবী অচিরেই ভরে
উঠবে মানুষরূপী অমানুষের দলে ।
তোমরা এর প্রতিকারে কী নিদান দেবে?