Adharmer Vinashkal Beije Uthuk Kurukshetrer Shankha – অধর্মের বিনাশকালে বেজে উঠুক কুরুক্ষেত্রের শঙ্খ

(নিবন্ধ) যুগশঙ্খ পত্রিকায় প্রকাশিত
অধর্মের বিনাশকালে বেজে উঠুক কুরুক্ষেত্রের শঙ্খ  – হরবিলাস সরকার

একদা কোন্ অতীতে সিন্ধুর বুকে ধ্বনিত হয়েছিল শাশ্বত বাণী ‘অখণ্ড ভারত’, তা ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য। তা কোনোভাবেই লঙ্ঘিত হবার নয়। সৃষ্টির ঊষাকাল থেকেই সে যে বসুন্ধরার অকৃপণ আশীর্বাদ।

ভারত কখনও নিজেকে ভাঙতে চায়নি। সে শুধুই পূর্ণতা চেয়েছে। সে নির্দ্বিধায় সকলকে আপন করে নিয়েছে। তার স্নিগ্ধ-শীতল কোলে লালিত-পালিত হয়েছে সন্তানেরা। সে তো ছিল বিবিধের মাঝে মিলন মহান। সে এক মহাতীর্থক্ষেত্র, প্রেমের পূণ্যভূমি, বৃন্দাবন। এখনও সে বৃন্দাবনে বাঁশি বাজে রে।

সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বসুন্ধরার মাঝে আমাদের এই ভারতবর্ষ, এ যে সকল দেশের সেরা। তাঁর চিরন্তন সৌন্দর্যের টানে এদেশে এসেছে ইংরেজ, এসেছে ফরাসি, ওলন্দাজ, পারসিক, আরও কত জ্ঞানীজন! আবার কেউ এসেছে সম্পদের মোহে, কেউ এসেছে সাম্রাজ্য বিস্তারের নেশায়। ভারতমাতা অতিথি রূপে সকলকে সাদরে আপ্যায়ন করেছে। কালের গতিময় পথে পথে বারবার সে তাঁর আঁচল বিছায়ে দিয়েছে। স্নেহ-মমতা-ভালবাসার পরশে কেউ জড়িয়েছে পরমাত্মীয়তার বন্ধনে, কেউবা চলে গেছে ভারতমায়ের বুকের রক্ত-রস নিঙরে নিয়ে। ধূর্ত শাসক ইংরেজ তার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ। শাসক ইংরেজ শাসন-শোষনেই ক্ষান্ত হয়নি। এদেশের সম্পদে নিজের দেশকে সমৃদ্ধ করেও সে অকৃতজ্ঞতার নিদর্শন রেখে গেছে। ভাঙো, বিভেদ বাঁধাও, তারপর শাসন আর শোষণ কর, এই ঘৃণ্য অভিশাপে ভারতমায়ের বুক বিদীর্ণ হয়েছে। বিচ্ছেদ-ব্যথায়, দারিদ্রে সে জর্জরিত হয়েছে।

কিন্তু ইংরেজের আগমনের আগেও সিন্ধুপারে কী কদর্য অন্যায় ঘটেছিল? স্মৃতির পাতা খুলে আজ যে দু’চোখে দেখার সময় এসে গেছে।

প্রায় সহস্র বছর ধরে ইসলামের অপশাসনে কালিমালিপ্ত হয়েছিল আমাদের অতীতের উৎকর্ষের শিখরে ওঠা সভ্যতা। যে সভ্যতা আলোকবর্তিকা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বজুড়ে, সেই সিন্ধু সভ্যতা ক্রম বিকশিত হয়ে আবির্ভূত হয়েছিল বৈদিক সভ্যতা। বেদের রচনাকাল ছিল তারই কোনো এক পর্বে। বেদের অর্থ জ্ঞান। বেদ সনাতন, জীবনদর্শন। বেদ জীবনবেদের উজ্জ্বল ভিত্তিপ্রস্তর। যা আরও সমৃদ্ধ হয়েছিল পরবর্তীতে শ্রীরামচন্দ্রের সময়কালে। নীতিবৎসল, প্রজাদরদি, সুশাসক শ্রীরামচন্দ্র ভারত ভূখণ্ডে মহামানব রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁর মহান কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে। তাঁর উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে পড়েছিল বিস্তীর্ণ ভারতের এক দিগন্ত থেকে আর এক দিগন্তে। মানুষের মনের কুটিরে তিনি ঠাঁই পেয়েছিলেন দেবতা রূপে। মহাপরাক্রমশালী রাবণও মৃত্যুকালে রামচন্দ্রের অনুগত হয়েছিলেন। মৃত্যুশয্যায় শায়িত রাবণের কাছে এসেছিলেন উদার মনের রামচন্দ্র, ভাই লক্ষ্মণকে সাথে নিয়ে। সুনিপুণ রাজনীতির পাঠ শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। আড়ষ্ট কন্ঠে উত্তর  এসেছিল, প্রভু, আমি আপনাকে কী শেখাবো! শুধু বলতে চাই, আপনার হাতে মৃত্যুবরণ করে আমি আজ ধন্য হলাম। সত্যিই ধন্য হয়েছিলেন রাবণ। তবে রামচন্দ্র লঙ্কা দখল করেননি। ফিরে এসেছিলেন সীতাকে নিয়ে। এই তো ভারতমায়ের শিক্ষা। তাইতো রামচন্দ্র ভারতের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীরামচন্দ্র।

মহাভারতের যুগ এলো। ভারত তখন মহামানবের শ্রেষ্ঠ তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। শরীর থাকলে রোগ এসে বাসা বাঁধে। শয়তানের প্ররোচনায় হিংসা, লোভ, ব্যভিচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। রক্ষাকর্তা রূপে আবির্ভূত হলেন শ্রীকৃষ্ণ। কুরুক্ষেত্রের ময়দানে জয় হল সত্যের। আর শ্রীকৃষ্ণ মুখনিঃসৃত বাণী ‘গীতা’ হয়ে উঠল মানব জীবনের পাথেয়, সর্বব্যাপী এক মহান আদর্শ। মহান কার্ল মার্কস নন, সাম্যের কথা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম শ্রীকৃষ্ণই বলে গিয়েছিলেন। গীতা তার অকাট্য প্রমাণ।

অধর্মের বিনাশকালে বেজে উঠুক কুরুক্ষেত্রের শঙ্খ

ধর্মকে বাদ দিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তাই মার্কসবাদ মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেননা, ধর্মকে বাদ দিয়ে মানুষ তৈরি হয় না। ধর্মহীন মানুষ যতই পণ্ডিত হোক না কেন, সে হল রোবট বা কৃত্রিম মেধার মতো, যার  ভেতরে মন বা হৃদয় থাকে না। হৃদয়হীন মানুষেরা সাম্য প্রতিষ্ঠা করলেও অচিরেই তা ভেঙে যাবে। কারণ, ধর্ম না থাকলে হৃদয়ে হৃদয়ে বন্ধন রচিত হবে কেমন করে?

একমাত্র হিন্দু ধর্মই বন্ধনে বাঁধতে পারে। কেননা, জীবন বিকাশের, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব আধার নিয়ে হিন্দু ধর্ম উদ্ভাসিত। নাস্তিক, আস্তিক এবং সিন্ধুপারে বংশপরম্পরায় জন্মলাভ করে কোন এক কালে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, সকলের জন্যই হিন্দু ধর্ম অর্থাৎ সনাতন ধর্ম, যা চিরন্তন সত্য। আসলে এ হলো অখণ্ড ভারতের সংস্কৃতি। জীবনের মূল মন্ত্র হলো অহিংসা, প্রেম, ভালোবাসা। এ তো বীরের ধর্ম। ভারতমাতার সন্তানেরা বীর। সে যে অকারণে, নিরস্ত্র কাউকে আঘাত করে না। কিন্তু কেউ যদি অহিংসার দেশে আগুন জ্বালায়, পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করে তোলে, বর্বর আঘাত হানে, ভারত বীরের মতো প্রতিরোধ করে, উচিত শিক্ষা দেয়। আগাছা উপড়ে ফেলে জমিনকে শস্যময় করে তোলে। এর মধ্যেই নিহিত আছে মনুষ্যত্ব, মূল্যবোধ, মানবতা, আর যাকিছু সুন্দর।

বহিরাগত ইসলামপন্থীরা এই সৌন্দর্যময় দেশকে কলঙ্কিত করেছে, হিন্দু ধর্মের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত করেছে, পরধর্ম হনন করেছে, জিহাদের বীজ বুনেছে। জিহাদি বাবর কৃপাণ হাতে এই উপমহাদেশে এসে ভারত ভূখন্ডের প্রাণকেন্দ্র রামজন্মভূমির উপর নির্মম আঘাত করে যে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করেছিল, অলক্ষ্যে বিরাজিত শ্রীরামচন্দ্র আর তাঁর উপাসকগণ প্রায় পাঁচশত বছর ধরে সেই যন্ত্রণা নীরবে সয়েছে। তারপর জয় হয়েছে সত্যের। রাম মন্দির পুনঃনির্মিত হয়েছে। শ্রীরামচন্দ্র স্বমহিমায় আবার বিরাজিত হয়েছেন। ইংরেজের ২০০ বছরের অপশাসন থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। বর্তমানে ইসলাম আবার নতুন করে আঘাত হানতে চায়। ভারতের অকৃপণ দান স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে আজ জিহাদি মৌলবাদীরা দাপিয়ে বেড়ায়। ওরা ভারতকে আবারও খণ্ডিত করে বৃহত্তর পাকিস্তান গড়তে চায়। এই হিন্দুস্তানের মাটি কেড়ে নিতে চায়। যদি এই হীন পণ করেই থাকে, আর যদি সারা ভারত জুড়ে  ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠা করবার দুঃসাহস দেখায়, ভারত উপমহাদেশের নাম বদলে ইসলামিক উপমহাদেশ গড়তে মরীয়া হয়ে ওঠে, তবে ভারতমায়ের গৈরিক সন্তানেরা নীরবে চেয়ে চেয়ে না দেখে, অশ্রুজলে সিক্ত না হয়ে আবারও আহবান করুক কুরুক্ষেত্রকে। তবে তা হবে মহাকুরুক্ষেত্র। হিসাব বুঝে নেবার দিন এসে গেছে। যা কিছু হারিয়েছি, তা ফিরে পাবার অধিকার আছে। ‘অখণ্ড ভারত’  দাবি নয়, অধিকার। অধর্মের বিনাশকালে বেজে উঠুক শঙ্খ। অমৃতবাণীতে মুখরিত হোক আকাশ বাতাসঃ

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।
……………………………………………………..

Leave a Comment