বাঙালির কবিপক্ষ

প্রিয়

  আজ সন্ধ্যায়,

    বাঙালির কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের জনপ্রিয়তা বিশ্বভূবনজুড়ে।তাদের সৃষ্টি মূলতঃদুটি ভিন্ন ধারায়।রবীন্দ্র-কবিতামৃতবানী সুমধুর সূরধ্বনি হয়ে হৃদয়তন্ত্রীর তারে ঝংকার তুলেছে।সেই সুধারসে সিঞ্চিত জীবন অমানিশার অন্ধকারে খুঁজে পেয়েছে নতুন আশার আলো।এভাবেই রবীন্দ্রনাথ মূলতঃচেয়েছেন মানুষ গড়তে।

      নজরুলের কবিতায় জীবনের মর্মব্যথা বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছে।অনুরণিত হয়েছে মাটি-জল,আকাশ-বাতাস।নতুন ভোরের স্বপ্নে ঘুম ভেঙেছে মানুষের।এভাবেই নজরুল চেয়েছেন পরাধীনতার গ্লানি মুছে সুন্দর ভূবন গড়তে।

      দুটি ধারা,দুটি পথ আলাদা হলেও লক্ষ্য সেই অভিন্নই।মানুষই গড়ে তোলে সংস্কৃতি,নতুন সভ্যতা,নতুন সমাজ,নতুন পৃথিবী।

      ব্রাক্ষধ্রর্মে দীক্ষিত,ঈশ্বরের চরণে সমর্পিত রবীন্দ্রনাথ প্রার্থনা করেছেন-‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে।সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে’।তিনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ,মহিমার আধারে ফুল ফোটাতে চেয়েছেন শাখে শাখে।আর ‘সবার উপরের মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’-এই জ্ঞানালোকে উজ্জীবিত নজরুল প্রতিধ্বনিত করেছেন তাঁর কন্ঠস্বর, ‘গাহি সাম্যের গান,মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,নহে কিছু মহীয়ান’।রাশিয়ার সমাজতন্ত্র দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছেন কিন্তু তিনি ব্যক্তিসম্পত্তির নির্মূলীকরণ দেখে খুশি হননি।কারণ,তিনি মনে করতেন-‘ব্যক্তিসম্পত্তি’ নিজেকে প্রকাশ করবার একটা উপায়স্বরূপ।তিনি বিশ্বাস করতেন-প্রদীপের আলোর নীচে যেমন অন্ধকার বিরাজ করে,তেমনি সভ্যতায় চিরকাল একদল মানুষ উপরে থাকে,আর একদল থাকে নীচুতলায়(সূত্রঃরাশিয়ার চিঠি)।তাই তিনি চাইতেন-উপরতলার মানুষগুলো যেন তাঁদের উৎপন্ন ফসলের প্রয়োজন মতো অংশ নিজেদের জন্য রেখে উদ্বৃত্ত অংশ নীচুতলায় সমহারে বন্টন করে দেয়।

      কিন্তু নজরুল মনে করতেন-মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ,উঁচু-নিচু নেই,এ-সবই মানুষের সৃষ্টি।প্রকৃতির সম্পদের মালিক শুধু প্রকৃতিই।তাঁর দেওয়া ফসলের অধিকার সবার সমান।

      পরিশেষে কবিপক্ষের আসরে দাঁড়িয়ে বলব-দিন বদল হয়েছে,মানুষের রুচি-সংস্কৃতির বদল হয়েছে।আজও হয়তো জীবনের বহু ক্ষেত্রেই মানবতাবাদী যুগের অন্যতম শ্রেষ্ট দুই মনীষী রবীন্দ্রনাথ,নজরুলের বানী,আদর্শ প্রাসঙ্গিক।কিন্তু আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীর যুগে একটা সন্ধিক্ষণে চরম সংকট,হতাশার মুখোমুখী এসে দাঁড়িয়েছিযেদিকে তাকাই শুধুই অন্ধকার।চাই আবার নতুন ভোরের আলো।

       সময়ের গতিপথে গতকাল যা ছিল প্রগতিশীল,আজ তা প্রতিক্রিয়াশীল,আজ যা গতিশীল,আগামীকাল তা নতুন পরিবেশে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যাবে।অসীম এই বিশ্বব্রক্ষান্ডে কোনো কিছুই স্থির নেই।স্থিরতা মানেই পিছিয়ে পড়া,কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া।

       তাই নতুনকে স্বাগত জানাতে হবে।আবার আসুক নতুন বসন্ত,ফুটুক নতুন ফুল,ছড়াবে সুবাস আবার দিগন্তজুড়ে।

                                    

                                     নমস্কারান্তে—
                                     হরবিলাস সরকার
                                     রাধারঘাট সাহেববাগান,
১৫.০৫.২০১৮                               রাধারঘাট,মুর্শিদাবাদ
                                     ফোনঃ৮৯০০৩৮৩৫৯২