গল্প (রূপকথা) | |
নবনীতার স্বর্গ লাভ | – হরবিলাস সরকার |
স্বর্গরাজ্যের বিচারশালায় মামলা দায়ের হয়েছে। শুনানির দিন যথাসময়ে প্রেতিনী নবনীতা হাজির হয়েছে। প্রহরীদের কড়া প্রহরায় বিচারক এসে বসলেন তাঁর আসনে।
বিচারের ঘন্টা বেজে উঠল। কাঠগড়ায় এসে দাঁড়াল নবনীতা। বাদীপক্ষের উকিল গজরাজ বিচারককে বললেন, হুজুর, এই মহিলা প্রেতিনী নবনীতা। আপন কৃতকর্মের জন্য ওর নরকে ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু ওই পাপী স্বর্গসুখের বাসনায় বড়ই মরীয়া। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। স্বর্গলোকের সংবিধান অনুযায়ী এরূপ বাসনা গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি নরকের অন্ধকার কুটিরে চিরনির্বাসন।
বিচারক জিজ্ঞেস করলেন, ওগো মেয়ে, তোমার কৃতকর্মের কারণে তুমি যদি পাপীই হয়ে থাকো, তবে স্বর্গসুখের কামনা করছ কেন ?
মহামান্য, জীবনে আমি কখনও পাপের কাজ করিনি। আমার উপর যা হয়েছে, অন্যায়ভাবে হয়েছে। সবই আমার ভাগ্যের ফের।
হুজুর, মিথ্যে কথা। ও যে পাপী, আমি প্রমাণ করে দেব। আপনার অনুমতি পেলে আমি ওকে গুটি কয়েক প্রশ্ন করতে চাই।
অনুমতি দিলাম।
বলো প্রেতিনী, তোমার বয়স তো অল্প, বিবাহটাও মনে হচ্ছে বেশি দিনের নয়। তা কী এমন ঘটলো যে, এরই মধ্যে তোমাকে আত্মহত্যা করতে হল?
উকিল সাহেব, আমি আত্মহত্যা করিনি। আমার স্বামী আমাকে হত্যা করেছে।
আচ্ছা ধরেই নিচ্ছি, আত্মহত্যা নয়, হত্যা। তাতে কী হয়েছে? দু’টো ক্ষেত্রেই শাস্তি তো একই। নরকবাস। তবে স্বর্গসুখের বাসনা কেন?
প্রেতিনী নীরব।
বুঝেছি, তোমার কাছে কোন উত্তর নেই। তাহলে এবার বলো, তোমার স্বামী তোমাকে হত্যা করল কেন?
পুনরায় বিবাহ করবার বাসনায়।
প্রতিপক্ষের উকিল হংসদেব উঠে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদের কন্ঠ ধ্বনিত হল। প্রসিকিউটর গজরাজ, আপনি আমার মক্কেলকে বিভ্রান্ত করছেন। আর এভাবে সত্য উদঘাটনে বাধার সৃষ্টি করছেন।
বিচারক আপত্তির মান্যতা দিলেন।
হংসদেব বললেন, প্রভু, নীলগ্রহে জীবিতকালে নবনীতা ছিল পুণ্যবতী এক মহিলা। বিবাহের কিছুকাল পর ওর স্বামী অমর্ত্য ‘শীলা’ নামে এক সুন্দরী মহিলার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। তাকে পাবার বাসনায় অমর্ত্য পাগল হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল। নীলগ্রহে হিন্দু ধর্মের নিয়মানুসারে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই জীবিত এবং বন্ধনে আবদ্ধ থাকলে তাদের কেউ পুনরায় বিবাহ করতে পারে না। তাই পথের কাঁটা দূর করতে এক নিশুতি-প্রহরে নবনীতার শ্বাস রুদ্ধ করে মৃত্যু ঘটায় অমর্ত্য এবং তার বাড়ির এক তলার একটি অব্যবহৃত ঘরের মেঝে খুঁড়ে নিথর দেহটাকে কবর দেয়। অপঘাতে মৃত্যুর দরুন যমরাজ প্রেতিনী নবনীতাকে নিয়ে এসে নরকে ঠেলে দেয়। প্রভু, এখন সুবিচারের ভার আপনার উপর। আমি শুধু বলতে পারি, নবনীতা স্বর্গলোকের দিন যাপনের অনুমতি পেলে ধন্য হয়।
গজরাজ হেসে উঠলেন। বললেন, উকিল সাহেব, এখন তো এই কেসের সঙ্গে নতুন বিষয় জুড়ে গেল। পরকীয়া। আর আমার সন্দেহের তালিকায় আত্মহত্যার কথাটাও নতুন করে এসে জুড়ে গেল। অর্থাৎ হত্যা না আত্মহত্যা? তার আগে পরকীয়ার ব্যাপারে একটু বলে নিই। মাই লর্ড, অমর্ত্য যদি পরকীয়ায় মত্ত হয়ে ওঠে, তাতে দোষের কী? কেননা, নীলগ্রহে পরকীয়া কোনো অপরাধ নয়। আবার স্বর্গলোকেও যে পরকীয়া নেই, বলা যাবে না। দেবরাজ ‘ইন্দ্র’ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
একথার মান্যতা না দিয়ে বিচারক বললেন, আপনি অজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন গজরাজ। স্বর্গলোক পরকীয়াকে মান্যতা দেয় না। যারা এই বাসনা চরিতার্থ করেছেন, তারা শাস্তি পেয়েছেন। এই কারণেই ইন্দ্রদেব স্বর্গলোক কেন, নীলগ্রহেও পূজিত হন না।
আনত মস্তকে গজরাজ বললেন, হুজুর, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর আমি আমার পুরনো বক্তব্যেই ফিরে আসি। প্রেত নবনীতাকে যদি তার স্বামী হত্যা করে থাকে, তাহলে সেই অভিযুক্ত অমর্ত্যকে আদালতে হাজির করানো হোক।
হংসদেব চিন্তায় পড়ে গেলেন।
মহামান্য বিচারক বললেন, হত্যাকারী অমর্ত্য জীবিত। সে নীল গ্রহেই আছে। স্বর্গের বিচারশালায় কোনো জীবিত মানুষকে নিয়ে আসাও সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বিচার প্রক্রিয়ার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অতএব, আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে, যতদিন অমর্ত্যর স্বাভাবিক মৃত্যু না হয় অর্থাৎ অশরীরী আত্মাকে হাজির করানো সম্ভব না হয়, ততদিন এই আদালত মুলতুবি থাকবে। তবে নবনীতার হত্যাকাণ্ডের সত্যাসত্য উদঘাটনের জন্য আমি সিবিআই তদন্তের আদেশ দিচ্ছি। আমাদের সিবিআই অফিসারগণ স্বর্গের সীমা অতিক্রম করতে অপারগ। সে কারণে তারা নীলগ্রহের সিবিআই অফিসারদের সাথে বেতারে কথাবার্তা, আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাতে পারবে। আজকের মতো বিচারশালার কাজ এখানেই সমাপ্ত হল।
অসহায় প্রেতিনী উকিল হংসদেবের সামনে কেঁদে ফেলল। পরহীতব্রতী উকিল তাকে আশায় উৎসাহিত করে যমরাজের শরণাপন্ন হতে বললেন।
অন্তর্যামী যমরাজ বসে আছেন নরকের দ্বারে। তার পায়ে গিয়ে পড়ল প্রেতিনী। তিনি সবকিছু অনুধাবন করলেন। দুঃখে বিগলিত হলেন। কিন্তু নিজের সীমা অতিক্রম করবেন কী করে? বললেন, ওগো মেয়ে, জীবন-মৃত্যু আমার হাতে নয়। আমি শুধু মৃতকে নিয়ে আসতে পারি, জীবিতকে নয়। এই সময় তোমার স্বামীর মৃত্যু ঘটাতে পারলে যথাশীঘ্র আমি তাকে নিয়ে আসব।
না, যমরাজ। স্বামী আমার যেমনই হোক, আমি তার অকালমৃত্যু কামনা করতে পারি না। তাতে যে আমার পাপ লাগবে। তার চেয়ে নরকবাসই ভালো।
ঠিক আছে। পাপের পথে নয়, পুণ্যের পথে থেকেও তা করা যাবে। দেখ, একদিন তো সবাইকেই মরতে হয়। নিয়তি চাইলে মৃত্যুর দিন এগিয়ে আনতে পারে। সেটা কিন্তু অকালমৃত্যু নয়। তাতে পাপও হবে না। এমন একটা তো কিছু করতেই হবে। নাহলে তুমি স্বর্গে পৌঁছাবে কেমন করে?
প্রেতিনী অতি দুঃখের সাথে অনুনয় বিনয় করে বলল, মহারাজ আমি তাহলে এখন কী করব?
যমরাজ চিন্তামগ্ন হলেন। ক্ষণিক পরে বললেন, একটা উপায় আছে।
কী উপায়, বলুন।
শোন প্রতিনী। আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে এই যমালয়ে নিয়ে এসেছিলাম দশরথ-পত্নী ছলনাময়ী কৈকেয়ীর অশরীরী আত্মাকে। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারে। সে এমন কিছু পরামর্শ দেবে, সেই মতো চললে নিয়তি তোমার স্বামীর মৃত্যুর দিনক্ষণ এগিয়ে আনতে পারে। একমাত্র নিয়তিরই এই ক্ষমতা আছে। তাঁর উপরে কারও হাত নেই।
রানী কৈকেয়ীকে আমি কোথায় পাবো?
নরক রাজ্যের যন্ত্রণা ভোগ করার পর সে এখন স্বর্গলোকে আছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে এক ছোট্ট কুটিরে।
কিন্তু আমার যে স্বর্গলোকে যাবার অনুমতি নেই।
জানি। আমি একখানা পত্র লিখে দিচ্ছি। স্বর্গের দ্বারে নারায়ণ আছেন। তাঁকে এই পত্র দেখালেই তিনি বিশেষ বিবেচনায় সীমিত সময়ের জন্য অনুমতি দেবেন।
পেতিনী সেই পত্র নিয়ে বিষাদ সংগীত গাইতে গাইতে রওনা দিল। দু’দিন দু’রাত পর সেই ছোট্ট কুটিরে গিয়ে পৌঁছালো। রানী কৈকেয়ীকে প্রণাম জানিয়ে নিজের দুঃখের কথা বলল। কৈকেয়ীও নিজের জীবনের সুখ-দুঃখের কথা বলে নবনীতাকে ছোট বোনের মতো আপন করে নিল। তারপর বলল, কষ্টসাধ্য হলেও তোর কাজে তুই সফল হবি। তবে প্রয়োজন হবে এক সুন্দরী কুমারী মেয়ের।
দিদি গো, সে তো আমার ছোট বোনই আছে। দেখতেও আমারই মতো।
তবে তো সোনায় সোহাগা হল। শোন্ এবার মন দিয়ে। মায়াশক্তিকে আহ্বান কর্। সে আবির্ভূত হলে দুটো বর চেয়ে নিবি। করজোড়ে এভাবে বলবি, হে প্রভু, একঃ আমার পূজার ফুল প্রেম-ভালোবাসার অর্ঘ্য রূপে আমার স্বামীর হৃদয় আঙিনায় সমর্পণ করে দাও। দুইঃ আমার হৃদয়ের দুঃখ-ব্যথা, শূন্যতা আমার বোনের জীবন-নদীতে বিসর্জন দিয়ে দাও।
নবনীতার আহবানে অন্তর্যামী মায়াশক্তি আবির্ভূত হল। ধ্যানমগ্ন প্রার্থনারত নবনীতাকে দেখে খুশি হল। বর প্রদানও করল। বিদায়কালে একটা ফুল হাতে দিয়ে বলল, এটা বিশেষ শক্তিধর ফুল। নিয়তিকে স্মরণ কর্। সে আসবে। ফুলটা ভক্তিভরে তাঁর চরণে নিবেদন করবি। তোর মঙ্গল হবে।
নিয়তি সত্যিই এল। নবনীতা তাঁর পায়ে ফুল নিবেদন করে কাল বিলম্ব না করে ছুটলো নীলগ্রহের নীলগঞ্জের উদ্দেশ্যে, তার বোন নীলাঞ্জনার কাছে।
এক চন্দ্রালোকিত নিশুতি রাতে নবনীতা নিদ্রারত নীলাঞ্জনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো অশ্রুসজল নয়নে। নীলাঞ্জনাও চোখ মেলে দেখলো দিদিকে। দু’জনের চোখের আলো মিলেমিশে এক নতুন আলোর বিচ্ছুরণ তৈরি হল। তারই প্রভাবে দিদির হৃদয়ের সমস্ত দুঃখ-ব্যথা, শূণ্যতা বোনের হৃদয়ে সমর্পিত হয়ে গেল।
প্রেমানলে দগ্ধ হল নীলাঞ্জনা। ওই নিশুতি রাতেই সে দিদির বেশ ধরে অমর্ত্যর বাড়িতে ছুটে এলো। নবনীতাও অশরীরে এল পেছন পেছন। ঘরে প্রবেশ করে কবরের উপর বসে অশ্রুনয়নে করুন সুরে গেয়ে উঠল দুঃখের গান। অশ্রুনয়নে নীলাঞ্জনা জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে। পাল্লাটা খুলে গেল আপনা থেকে। প্রকৃতিও ব্যথায় কাতর হল। গানের সুরে ঘুম ভেঙে যায় অমর্ত্যর। প্রতিদিন নিশুতির প্রহরে এমন করেই চলতে থাকে।
একদিন শীলা দোতলার খাটে, তখন গভীর নিদ্রায়। তাকে একা রেখে অমর্ত্য নেমে আসে নিচে।
উত্তর-পশ্চিম কোণের একতলার ঘরখানা আর খোলা হয় না। এই ঘর থেকেই আওয়াজ আসছে।
ঘরের কাছাকাছি আসতে গানের সুর আরও জোরালো হয়ে কানে আসে। দরজায় কান পেতে শোনে অমর্ত্য। হ্যাঁ, সত্যিই তো নবনীতা গাইছে। গাইতে গাইতে কাঁদছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? না, এইতো আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। কিন্তু কী করে সম্ভব! নবনীতাকে আমি যে নিজের হাতে মেরে কবর দিয়েছি। দরজার সরু ছিদ্রপথে এবার চোখ রাখে অমর্ত্য। ভেতরে যে আলো জ্বলছে। এই ঘরে তো আলো জলে না। ঐ তো নবনীতা, নব বধূর সাজে। একি? নিমেষে যে মিলিয়ে গেল। গানও বন্ধ হয়ে গেল। পেছনের জানালার পাল্লাটা খোলা কেন? ওই তো জানালার ওপাশে নবনীতাকে দেখতে পাচ্ছি। দাঁড়িয়ে আছে। গ্রিলটা মরচেতে খেয়ে খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলেছে। নিশ্চয়ই ওই জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেছে নবনীতা।
মোবাইলে টর্চ জ্বেলে পেছনে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যায় অমর্ত্য। ঐ তো দ্রুত পা ফেলে চলে যাচ্ছে নবনীতা। কে তুমি ? দাঁড়াও। অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
ক’দিন এমন করে ঘটার পর একদিন অমর্ত্য নবনীতার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেল। নবনীতা, তুমি!
দিদির মতোই হুবহু একই কন্ঠস্বর নীলাঞ্জনার। উত্তর দিল, হ্যাঁ গো,তোমার নবনীতা। চিনতে পেরেছো তবে! আমি কি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি! হাসতে হাসতে লুকিয়ে গেল জঙ্গলের আড়ালে।
ফিরে এল অমর্ত্য। কিন্তু নবনীতা নতুন করে জায়গা করে নিল অমর্ত্যর হৃদয়ে। হত্যার স্মৃতিটা আপনা থেকেই মুছে গেল পুরোপুরি।
এদিকে প্রতিদিন অমর্ত্যর গভীর রাতে বিছানা ছেড়ে চলে আসা, শীলা টের পেয়েছে। মনে মনে ভাবছে, নবনীতার পর আমাকে পেয়েও অমর্ত্যর খিদে বুঝি মেটেনি। আবার নিশ্চয়ই কোনও সুন্দরী মেয়ে জুটেছে, আর খিদেটাও বেড়েছে।
পরের দিন। মাঘী পূর্ণিমার রাত। আজ অমর্ত্য নবনীতার একেবারে মুখোমুখি। রূপের মোহে মুগ্ধ হয়ে তাকে অমর্ত্য স্পর্শ করতে চাইল।
না, আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমি নবনীতা নই।
নবনীতা নও! তবুও দু’হাতে স্পর্শ করল। এইতো তুমি আমার নবনীতা।
না, আমি নীলাঞ্জনা। নবনীতার যমজ বোন। ……….।
স্পর্শ করামাত্র মায়াশক্তির প্রভাবে অমর্ত্যর হারানো স্মৃতি পুনরায় ফিরে এল। ক্ষণিকের মধ্যেই নবনীতার প্রতি ঘৃণা আর নীলাঞ্জনার প্রতি আসক্তি জন্মে গেল।
পেছন থেকে এ দৃশ্য দেখছে শীলা। সে আজ এসেছে। অমর্ত্যর লাইসেন্স প্রাপ্ত রিভলবারটাও সঙ্গে এনেছে। ভেতরে তার ক্রোধ লেলিহান অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠছে। অমর্ত্য, তোমাকে আমি ঘৃণা করি। জানি, নবনীতার মতো আমাকেও তুমি মেরে ফেলবে। পথের কাঁটা সরিয়ে ওই মেয়েটাকে বউ করে ঘরে আনবে। কিন্তু তা আমি হতে দেব না।
মুহূর্তেই পরপর দুটো গুলি। অমর্ত্য লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। নীলাঞ্জনা নিরাপদে দ্রুত ঐ স্থান পরিত্যাগ করে চলে গেল। যমরাজ এসে অমর্ত্যর প্রেতাত্মাকে নিয়ে সোজা চলে গেল যমালয়ে।
বিচারালয়ে আজই বিচার শুরু হলো। প্রতিপক্ষের উকিল হংসদেব বললেন, প্রভু, আমার মক্কেল নবনীতা সম্পূর্ণ নির্দোষ। সিবিআই অফিসার সরস্বতী কৃপালিনী বললেন, হুজুর, তদন্ত সম্পূর্ণ। এ ব্যাপারে নীলগ্রহের সিবিআই অফিসারগণ আমাদের প্রভূত সাহায্য করেছেন।
বাদীপক্ষের উকিল গজরাজ জোরগলায় দাবী করলেন, হুজুর, এই প্রেতিনী ছলনাময়ী, মায়াবিনী। নিজের আত্মহত্যা ঢাকতে নানা চমকপ্রদ খেলার আশ্রয় নিয়েছে। আসলে এ বড়ই দোষী। এর স্থান নরকেই।
প্রসিকিউটার হংসদেব জোরালো প্রতিবাদ জানালে বিচারক তাকে তার মতামত জানাতে বলেন। হংসদেব বললেন, প্রভু, সিবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী নবনীতা ছলনাময়ী, মায়াবিনী নয়। সে আত্মহত্যাও করেনি। তার স্বামী তাকে হত্যা করেছে। প্রভু, আমি একবার নবনীতাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই।
অনুমতি দিলাম।
দু’জন চেড়ী নবনীতাকে কাঠগড়ায় নিয়ে এলো।
নবনীতা, তোমাদের তো ভালবাসার বিয়ে। সেই বিয়েতে হঠাৎ চির ধরল কীভাবে?
স্বামী-নিন্দা মহাপাপ। তবুও বলছি। বিবাহিত জীবনের আগেও আমার স্বামীর চরিত্র ভালো ছিল না। সেকথা আমার অজানা ছিল। মানুষটাকে আমি ভালো করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সুন্দরী কোন মেয়ে চোখে পড়লেই ও পাগল হয়ে যেত। যদিও তার জন্য আমার কোন অভিযোগ ছিল না। তবু যে কেন এমন করল, আমি জানি না। এর পরের ঘটনা তো আপনারা সবটাই জানেন।
হংসদেব বিচারকের উদ্দেশে বললেন, প্রভু, এই নিন আমার মক্কেলের হত্যা সংক্রান্ত সিবিআই রিপোর্ট। এই হত্যা এখন প্রমাণিত।
প্রসিকিউটর গজরাজ প্রবল আপত্তি জানিয়ে বললেন, হুজুর, অপঘাতে হত্যা প্রমাণিত হলেও এখনও প্রমাণ হয়নি যে, ওর স্বামী অমর্ত্যই হত্যা করেছে। তাছাড়া অমর্ত্য যে চরিত্রহীন, তাও প্রমাণিত হয়নি। অন্তত সিবিআই রিপোর্ট সেকথাই বলে। হত্যার দায় এবং দুশ্চরিত্রের অভিযোগটা অমর্ত্যের উপর চাপানো হয়েছে। তাছাড়া অমর্ত্য নিজের মুখে এখনও স্বীকারোক্তি দেয়নি।
বিচারক আপত্তি বজায় রাখলেন। হংসদেব এবার অমর্ত্যকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসার অনুমতি চাইলেন।
অনুমতি মিলল। যমরাজ অভিযুক্ত প্রেত অমর্ত্যকে কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করালেন। এসময় গজরাজ একটুখানি চালাকির আশ্রয় নিলেন। কোন একটা অজুহাতে কাঠগড়ার একেবারে কাছাকাছি গিয়ে অমর্ত্যকে কানে কানে বলে এলেন, হত্যার কথা স্বীকার করো না। করলে নরকেও ঠাঁই মিলবে না। চিরজীবন নির্বাসিত হয়ে অন্ধকূপে ঘুরে বেড়াতে হবে।
হংসদেব এই ঘটনায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন। তবে প্রতিবাদ না করে অমর্ত্যকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তোমার স্ত্রী নবনীতাকে হত্যা করেছো?
না। আমি হত্যা করিনি।
গজরাজ উল্লসিত হয়ে বিচারককে বললেন, হুজুর, হত্যা অমর্ত্য করেনি। তার মানে নবনীতাকে অন্য কেউ হত্যা করেছে।
হংসদেব গলার স্বর চড়া করলেন। থামুন, প্রসিকিউটর গজরাজ। এই যে দেখছেন আমার হাতে, এটা কী?
ওটা তো একটা পেনড্রাইভ।
হ্যাঁ, এই পেনড্রাইভে আছে নবনীতার মৃতদেহের ময়না তদন্তের ভিডিও এবং হত্যাকারীর প্রমাণ। অফিসার সরস্বতী কৃপালিনী, আসুন। বাকি কাজটা আপনার।
সিবিআই অফিসার সামনে এসে বললেন, প্রসিকিউটর গজরাজ, এই ভিডিওটা আমরাই সংগ্রহ করেছি। তাতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, হত্যাকারী নবনীতার স্বামী অমর্ত্যই। মহামান্য আদালত, অনুমতি পেলে এটা চালিয়ে দেখাতে পারি।
মহামান্য আদালত অনুমতি দিলেন।
ভিডিও চালিয়ে দেখানো হল।
গজরাজ স্বীকার করলেন, মেনে নিচ্ছি অমর্ত্যই হত্যাকারী। কিন্তু হুজুর, অনেক হত্যা তো আচমকা বা দৈবাৎ ঘটে যেতে পারে।
প্রসিকিউটর হংসদেব রসিকতা করে বললেন, বাঃ গজরাজবাবু, আপনি কি মনে করেন, অমর্ত্য সোহাগ করতে করতে তার স্ত্রীকে হত্যা করে ফেলেছে? আপনি কি ময়না তদন্তের রিপোর্টটা ভালো করে পড়েছেন? না, পড়েননি। শুনুন তাহলে, নীলগ্রহের বিখ্যাত ডাক্তার এই রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন যে, হত্যাকারী হত্যার সময় নৃশংস হয়ে উঠেছিলেন। থামুন, আরও আছে। প্রভু, এই নিন নীলগ্রহের বিশিষ্ট এক মনোবিদের সার্টিফায়েড কপি। এই মনোবিদের কাছে চিকিৎসা করাতে স্বামীকে নিয়ে গিয়েছিল নবনীতা। কপিতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, অমর্ত্যর ভেতরে রয়েছে আদিম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবার অদম্য লালসা।
গজরাজ খানিকটা লজ্জিত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। পরক্ষণেই অভিযোগ করলেন, হুজুর, মৃত্যু তো সেই অপঘাতেই। স্বর্গলোকের সংবিধানের ২৩২ ধারার ৫ম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, কেউ আত্মহত্যা করলে বা কারও অপঘাতে মৃত্যু হলে তার ঠাঁই স্বর্গে নয়, নরকে।
হংসদেব মৃদু হেসে বললেন, আমার লার্নেড ফ্রেন্ড বোধ হয় ভালো করে পড়াশুনা করেন না। প্রভু, ওই ২৩২ ধারারই বিংশতি উপধারার ১০ম অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, কোন পুন্যবান বা পুন্যবতী যদি কারও দ্বারা অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেন, তার স্বর্গ লাভ হবে।
বিচারক বললেন, মিস্টার গজরাজ, হংসদেপ ঠিকই বলেছেন। আপনার যদি অন্য কোন প্রমাণ থাকে উপস্থাপন করতে পারেন।
হুজুর, এইমাত্র আমার কাছে একটা প্রমাণ এসেছে। আমি নিশ্চিত এই প্রমাণ নবনীতাকে পুণ্যবতীর নকল আচ্ছাদন উন্মুক্ত করে দোষী সাব্যস্ত করবে, আর ওর স্বর্গের রাস্তা চিরতরে বন্ধ হবে।
সময় অতিক্রান্ত রেখায়। আগামীকাল এই বিচার সভা যথাসময়ে আরম্ভ হবে বলে বিচারক আজকের মত আদালত মুলতুবি ঘোষণা করলেন।
প্রেতিনী নবনীতা নিরাশায় গভীর দুঃখে কাতর হল। উকিল হংসদেব সান্ত্বনার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তুমি শান্ত হও। আকাশে যতই ঘন কালো মেঘের আনাগোনা হোক্, দিবাকরকে দীর্ঘকাল ঢেকে রাখতে পারেনা। মনে রেখো, তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রসিকিউটর হংসদেব, যিনি সত্যের কাছে পৌঁছাতে কখনো ব্যর্থ হন নি। আজও হবেন না। আর আমার বিশ্বাস, তুমি নির্দোষ।
মন তবুও মানে না। নবনীতা একাকিনী গাঢ় অন্ধকারকে সঙ্গিনী করে বিনিদ্র রাত কাটাতে লাগলো।
পরদিন যথাসময়ে আদালত শুরু হল। বিচারক প্রসিকিউটর গজরাজকে প্রমাণ উপস্থাপনের আদেশ দিলেন।
হুজুর, সংবিধানের ২১০ ধারার একাদশ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, কোন ব্যক্তি যদি ছলনা, মায়া, ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে অপরাধমূলক কর্মে লিপ্ত হয়, তার জন্য স্বর্গের পথ চিরতরে বন্ধ। প্রেতিনী নবনীতা সেই কাজই করেছে। ইতিহাসের এক দুঃসময়ের কথা আমাদের মনে আছে। কুমাতা কৈকেয়ীর কারণে রামের বনবাস হয়েছিল। সেই কৈকেয়ী নরকের অন্ধকার কুটিরে দীর্ঘকাল যাপনের পর অবশ্য স্বর্গলাভ করেছে। তারই শরণাপন্ন হয়ে তার কুপরামর্শে নবনীতা নীলগ্রহে গিয়ে তার জীবিত বোনের সাহায্যে অমর্ত্যকে হত্যা করেছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় নবনীতা ছলনাময়ী, মায়াবিনী, ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারী।
প্রসিকিউটর হংসদেব বীর দর্পে উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীরভাবে বললেন, বাপরে বাপ! নিরীহ মেয়েটাকে একে একে কতগুলো অভিযোগে অভিযুক্ত করলেন। গজরাজ সাহেব, শুনুন মন দিয়ে। রাজা দশরথের মেজরানী কৈকেয়ী ছলনার বলে বড়রানীর পুত্র রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন ঠিকই, আপন পুত্র ভারতকে সিংহাসনে বসানোর জন্য। তাই বলে তিনি রামচন্দ্রকে পুত্রস্নেহে ভালবাসতেন না, কে বলেছে? মানবজাতির হৃদয়ে চিরদিন লেখা থাকবে, মাতা কৈকেয়ীর কারণেই পরোক্ষে রামচন্দ্র ইতিহাসে খ্যাত হয়েছেন। নারী নির্যাতনকারী রাবণও নিধন হয়েছে। এবার আসল কথায় আসি। নবনীতা অমর্ত্যকে হত্যা করেনি বা হত্যা করতেও কাউকে কোনরূপ প্ররোচনা দেয়নি। সে নীলগ্রহে গিয়েছিল তার বোনের কাছে, হৃদয়ের যন্ত্রণা জুড়াতে। বন্ধন-যন্ত্রণা জুড়াতে স্বামীগৃহেও গিয়েছিল। এর বাইরে অন্য কিছুই নয়।
বিচারক হংসদেবকে থামিয়ে গজরাজকে বললেন, আপনার অকাট্য কোন প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
হুজুর, আমার হাতের এই পেনড্রাইভে একটা ভিডিও আছে। এটাকে চালিয়ে দেখলেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, প্রেতিনী নবনীতা কত বড় অপরাধী।
ভিডিও চালানো হলো। সকলেই তা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছেন। গজরাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। হুজুর, ঐ দেখুন, স্বামীগৃহে নবনীতা। ছলনা, মায়ার বলে স্বামীকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। ওর বোন নীলাঞ্জনা, দিদির রূপ ধরে জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে। …..। অমর্ত্য এলো। নবনীতা অদৃশ্য হল। নীলাঞ্জনা জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অমর্ত্য মায়ার টানে বশীভূত হয়ে সেই দিকে ছুটে যাচ্ছে। গুলির শব্দ। অমর্ত্য লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। হুজুর, দেখলেন তো, নবনীতার ষড়যন্ত্রে, নীলাঞ্জনার গুলিতে এই হত্যা। অতএব প্রমাণিত হয়ে গেল ,নবনীতা অপরাধী। কাল বিলম্ব না করে আপনি রায় ঘোষণা করুন। অপরাধীর ঠাঁই নরকেই।
প্রতিপক্ষের প্রসিকিউটর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, মিস্টার গজরাজ, বিচারককে আপনি নির্দেশ দিতে পারেন না। একই সাথে বলছি, নবনীতা নির্দোষ। অকাট্য প্রমাণ আমার হাতেও আছে। তার আগে ভিডিওটা আরেকবার চালনা করুন। আর একটু ভালো করে দেখার আছে।
বিচারকের নির্দেশে পুনরায় ভিডিও চালনা করা হলো। ওই দেখুন গজরাজবাবু, নীলাঞ্জনা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ল। ছবিটাকে একটু দাঁড় করিয়ে বড় করে লক্ষ্য করুন। অমর্ত্যকে গুলিটা নীলাঞ্জনা করেনি। করেছে পেছন থেকে অন্য কেউ।
তাহলে গুলিটা নবনীতাই করেছে।
না উকিল সাহেব, অশরীরী আত্মা গুলি করতে পারে না। এই সামান্য জ্ঞানটুকু আপনার থাকা উচিত ছিল। বিচারকের উদ্দেশে বললেন, প্রভু, গুলিটা কে করেছে, তা আমার হাতে আর একটা ভিডিও আছে। ওটা চালালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
অনুমতি পেয়ে ভিডিও চালানো হলো। সকলের গভীর মনোযোগ। প্রভু, যা দেখছেন, তা হল নীলগ্রহের বিচারশালা। ওখানে অমর্ত্যের হত্যার বিচার চলছে। আর এই ভিডিওটার ওটা বাস্তব রূপ। স্পষ্ট ছবি। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ওই দেখুন, শীলা, অমর্ত্যর দ্বিতীয় স্ত্রী, পেছন থেকে গুলিটা করছে। …..। এবার শুনুন শীলার স্বীকারোক্তি। “হুজুর, কী অপরিসীম যন্ত্রণা আমার বুকে, বলে বোঝাতে পারবো না। আমার স্বামী অমর্ত্য ছিল পরশ্রীকাতর। ফুলের মতো নিষ্পাপ প্রথম স্ত্রী নবনীতা, যে নিত্যদিন লক্ষ্মীদেবীর পূজা করত, সংসারের মঙ্গল কামনা করত, তাকে অমর্ত্য হত্যা করে আমাকে ভুল বুঝিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করেছিল। তবু সংসারে মন দিয়েছিলাম। ইদানিং নবনীতার যমজ বোন নীলাঞ্জনার দিকে নজর পড়েছিল। ভাবলাম, নবনীতার মতো একদিন আমাকেও মরতে হবে। তাই আমি আমার স্বামীকে ওর লাইসেন্স প্রাপ্ত রিভলবার দিয়েই হত্যা করেছি।”
প্রভু, ভিডিওটা শেষ হয়নি এখনও। বিখ্যাত বিলেত ফেরত ডাক্তার, যিনি মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করেছেন, তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলছেন, “গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু গুলিতে মৃত্যু হয়নি অমর্ত্যর। কেননা, গুলির কোন চিহ্নই ছিল না দেহে। আসলে, ঠিক ঐ সময়েই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে অমর্ত্যর মৃত্যু ঘটে গিয়েছিল।”
সর্বশেষে এবার বিচারকের রায়টা শুনুন। “সমস্ত তথ্য প্রমাণ এবং জুরিগণের মতামতের ভিত্তিতে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে ঘোষণা করছি যে, অমর্ত্য একজন নিকৃষ্ট মানুষ ছিল। ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ওর মৃত্যু লেখা ছিল নিয়তির খাতায়। নীলাঞ্জনা এবং শীলা নির্দোষ। আদালত সসম্মানে ওদের মুক্তি দিচ্ছে।”
মুহূর্তে স্বর্গলোকের বিচারশালা চাপা কোলাহলে ভরে উঠল। বিচারক নীরবতা পালনের আদেশ দিলেন।
প্রসিকিউটর হংসদেব বললেন, প্রভু, আমার আর কিছু বলবার নেই।
মহামহিম বিচারক চূড়ান্ত রায়দান করলেন। “স্বর্গলোকের পবিত্র সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে আমি ঘোষণা করছি যে, প্রেত অমর্ত্য চিরনির্বাসনে অন্ধকূপে দিনযাপন করবে এবং নবনীতা একজন পূন্যবতী, নিষ্পাপ, আদর্শ নারীরূপে স্বর্গলোকে চিরসুখে নারায়ণের উপাসক হয়ে থাকবে।”
ঢং করে বিচারশেষের ঘন্টা বেজে উঠল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
নবনীতাকে ফুলমালায় সাজানো হল। কিন্তু তার চোখে আনন্দের অশ্রু। প্রসিকিউটর হংসদেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, আমরা সব বাধা কাটিয়ে সত্যের দ্বারে উপনীত হয়েছি। চেয়ে দেখো, স্বর্গের উদ্যানে নারায়ণ ফুল-মালা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। সত্য সুন্দর, চির সুন্দর।
……………………………………………………….