অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ
আছড়ে পড়েছে। করালগ্রাসী ‘করোনা‘ এবার আরও নির্মম ।
প্রতিষেধকও অমিল, নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাণবায়ু ‘অক্সিজেন‘ । চারদিকে মৃত্যু মিছিল । স্বজনহারানো করুণ আর্তনাদে
প্রকৃতি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে ।
মৃত্যু, সংক্রমনের ভয়ে গৃহবন্দি জনতা । কর্মহীন হয়ে পড়েছে অগণিত
মানুষ । ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে দারিদ্র্যপীড়িত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা । এরই মাঝে অসাধু
ব্যবসায়ীরা কালোবাজারির পসার সাজিয়ে বসেছে ।
আমাদের কান্ডারীরা দীর্ঘ সময়
পাশা–খেলায় মত্ত থেকে এখন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু
ইতিমধ্যে যা হবার তা হয়ে গেছে, হয়তো আরও অনেক
কিছু হতে বাকি আছে । শ্মশানে চিতার আগুন নাইবা নিভল আর মা ‘গঙ্গা‘ র বুকে শবেদের যাত্রার নাইবা শেষ হলো, তাতে কীবা আসে যায়? দুমুঠ
ক্ষুধার–অন্ন ভিক্ষা পেলে এই মানুষই
সব দুঃখ-ব্যথা ভুলে যাবে, আবার জয়ধ্বনি দেবে । এই আমাদের দেশ ‘ভারতবর্ষ‘ , এই আমাদের গণতন্ত্র ।
অদৃশ্য জীবাণুর সাথে মানুষের
মরণ-খেলা আর কতদিন চলবে জানিনা । তবে কোথায় আছে সেই স্বর্গরাজ্য যেখানে এই
মরণ-খেলা বন্ধ হয়েছে, দেখতে চাই ভুবন ঘুরে । অচিরেই সেই আশা পূর্ণ হলো । বৈশাখের
পূর্ণিমা রাতের নিঝুম প্রহরে স্বপ্নে ভ্রমণে গেলাম সেই অচিন দেশে । বড়ো আপনার মনে হল। অপূর্ব এ দেশ । চিরবসন্ত বিরাজমান । সবুজ অরণ্যের মাঝে মানুষের বসতি । নদী-নালা,পাহাড়-পর্বত,ঝর্ণা-ধারা সবই আছে । ভোরের আলো ফুটে উঠতেই পাখিরা ঝাঁক বেঁধে খাদ্যান্বেষণে
বের হয়, আবার
দিন শেষে ঝাঁক বেঁধে নীড়ে ফেরে।
তবে কিছুকাল আগেও এ দেশের অগণিত মানুষের মনে
সুখ-শান্তি ছিল না । তাদের কাজ ছিল না, ঘরে ঘরে খাবার ছিল না । সামান্য রোজগারের আশায় তারা পাড়ি
দিত এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে । তবু দারিদ্র্য
ঘুচতনা । অথচ কিছু মানুষের বিপুল
ঐশ্বর্য ছিল । একদিকে হাহাকার,
আরেকদিকে ছিল সর্বসুখ ।
রাস্তার একদিকে ফুটপথে শিশু-কোলে মা একমুঠ খাবারের জন্য হাত বাড়াত, অন্যদিকে বহুতল, প্রাসাদ, অট্টালিকা, পার্ক ; পার্কে সারিবদ্ধ দামি দামি গাড়ি ; চলতো
বিনোদন,
বিলাসিতা কতকিছু!
তারপর এদেশের পরিচালনায় নতুন সরকার এসেছে । মানব দরদী সরকার। এক অভিনব পদ্ধতিতে গঠিত
হয়েছে এই সরকার। এদেশের বিশেষ জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবি মহল দেখলো – নির্বাচনে হিংসা, রক্তপাত ঘটে । তাছাড়া মুক্তমনের সমর্থন খুব কমই পাওয়া
যায়। বাহুবল, অর্থবল, কূটচাল
খাটিয়ে,
প্রলোভন দিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করা হয়। নির্বাচিত
প্রতিনিধির অধিকাংশই যোগ্য হয় না। অপরাধীদের অনুপ্রবেশে আধিক্য ঘটে। ফলস্বরূপ
রাজনীতির মান নিম্নমুখী হয় । অপসংস্কৃতির জোয়ার বইতে থাকে। সুশিক্ষিত, সৎ ব্যক্তিগণ যোগ্য সম্মান না পেয়ে রাজনীতি বিমুখ হতে
বাধ্য হয়। সরকার নানাভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। যত দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে বিশেষ করে হতভাগ্য দারিদ্র্যপীড়িত মানুষজনকে।
এইসব নানা সমস্যা থেকে মুক্ত
হওয়া এবং সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে ওইসব মহান মানুষেরা তাঁদের কথা জনতাকে অবগত
করালেন । কী প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করা যায় তাও অবগত করালেন । আপামর জনতা এক
বাক্যে তা স্বীকার করে নিল । এরপর সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলতে থাকলো । এক-একটা
অঞ্চল ভিত্তিক দশ জন করে ব্যক্তিকে দলমত নির্বিশেষে বেছে নেওয়া হলো যাঁরা জ্ঞানে-গুণে শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতি, সৎ বা সতী-সাধ্বী, নির্লোভ
এবং পরোপকারী । তাঁদের মধ্য থেকে দু‘জন করে নিয়ে মহাকুমা ভিত্তিক কমিটি এবং একইভাবে জেলা কমিটি, রাজ্য কমিটি, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলো । এই কেন্দ্রীয়
কমিটি যৌথভাবে একেবারে নিম্নস্তর থেকে সমস্ত স্তরের মতামতের ভিত্তিতে জনকল্যাণমুখী
পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করবেন। এখানে কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশ্রেষ্ঠ
ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধান একজন মহিলা ‘দেশমাতা‘ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন। বাকি সদস্যরা দেশসেবক বা দেশসেবিকা
হিসেবে আখ্যায়িত হলেন। কোন সদস্যের মৃত্যু হলে বা অনুপস্থিতির কারণে অপেক্ষাকৃত
নিম্নস্তর থেকে বিবেচিত হয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ হবে ।
দেশমাতা সহ সমস্ত সদস্যগণ শপথ
বাক্য পাঠ করে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, “আমাদের
এই দারিদ্রপীড়িত, বেকারে ভরা দেশটিকে যদি এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করা যায় যেখানে প্রতিটি
পরিবারে একটি স্থায়ী চাকরি থাকবে, নিশ্চিত রোজগার থাকলে দারিদ্র্য দূর হবে, তবে ইতিহাসে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব। না, শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবে আমরা এর রূপ দেবো। এই ইতিহাস সৃষ্টির পথে আমরা কোন
বাধা মানবো না । এই মহতী চিন্তাধারা বাকি সব দেশকে প্রেরণা যোগাবে আমাদের পথ
অনুসরন করতে ।”
এই বিশাল দেশে কুড়ি কোটি
পরিবার। তারা পরিবার কল্যাণ যোজনা করে জন্মনিয়ন্ত্রণের সুপরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবার সংখ্যাটা কুড়ি কোটিতেই ধরে রাখবেন। এই
কুড়ি কোটির মধ্যে কারখানার মালিক, সচ্ছল ব্যবসায়ী, ধনী চাষী মিলিয়ে আনুমানিক এক কোটি পরিবার। বাকি থাকল ঊনিশ
কোটি পরিবার। এই ঊনিশ কোটি পরিবারের জন্যই বেশি ভাবনা । এদের কর্মসংস্থান চাই ।
সরকার তা নিশ্চিত করবে।
“ কাজটা কঠিন কিন্তু কঠিন হলেও তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করবেন । চাঁদ, মঙ্গলের মাটি ছুঁতে পারলে এ মাটিও ছোঁয়া
যাবে । প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা শক্তির। সেই ইচ্ছা শক্তি আমাদের আছে” ।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা লিপিবদ্ধ করে
তাতে সিলমোহর দেওয়া হল । পরিকল্পনাটি এইরকম –
প্রথমত: কিছু পদ বিলুপ্ত করা
হবে যেগুলি বর্তমানে নিষ্প্রয়োজন । যেমন রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির পদ । এর ফলে
সরকারের খরচ অনেক কমে যাবে ।
দ্বিতীয়তঃ সরকারের সমস্ত
স্তরের সদস্য, উচ্চপদস্থ আমলাদের বেতনের উর্ধ্বসীমা এমন ভাবে ধার্য হবে
যাতে সমস্ত স্তরের কর্মীদের বেতনে আকাশ-পাতাল বৈষম্য না থাকে । বেতন কাঠামোটি
এইরকম যে,
সর্বনিম্ন ত্রিশ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশ বা ষাট
হাজার টাকা । বেতনের এই উর্ধ্বসীমায় পৌঁছে গেলে আর বৃদ্ধি ঘটবে না । অবসরের পর , অবসরের আগে স্বেচ্ছাবসর নিলেও পরিবারের
আরেকজন চাকুরি পাবে। চাকুরী করার মত কেউ না থাকলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে।
তৃতীয়তঃ পরিবারের লোকসংখ্যার
ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কোন পরিবার দুটোর বেশি সন্তান লাভ করতে পারবে না ।
পরিবারে একজনই স্থায়ী চাকুরি পাবে। যে সমস্ত পরিবারে
একাধিকজন স্থায়ী চাকুরীরত আছে তাদের একজন বাদে অন্যকে বা অন্যদেরকে স্বেচ্ছায় চাকুরি ছাড়তে হবে। মনে রাখতে হবে লেখাপড়া শিখে ডিগ্রী লাভ করলেই চাকুরি করতে হবে এমন নয় । লেখা পড়ার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান লাভ। তবে ইচ্ছে করলে
কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে পারে। বাড়িতে বসে কুটির শিল্পের কাজ সকলেই করতে
পারে।
চতুর্থত: নামী-দামী বিশেষ
বিশেষ কোম্পানির ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম-নীতি বলবৎ থাকবে অর্থাৎ বেতন কাঠামো, চাকুরীর স্থায়িত্ব, পরিবারের একজনের চাকুরী এসবে কোনো বৈষম্য থাকবে না ।
পঞ্চমত:
স্বামী-স্ত্রী দুজনের পরিবার হলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের মত হৃদয়- বিদারক ঘটনা ঘটে থাকলে এবং
স্ত্রী একাকীত্ব জীবন কাটালে এবং চাকুরি না করে থাকলে তার চাকুরী বা ব্যয়ভারের
ব্যবস্থা বিবেচনা করে স্থির হবে।
ষষ্ঠতঃ
স্বামী-স্ত্রী দুজন জীবিত থাকাকালীন অথবা বিচ্ছেদের মতো ঘটনা না ঘটলে দ্বিতীয়বার
বিবাহ করতে পারবে না ।
সপ্তমতঃ
আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া বাধ্যতামূলক এবং শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ।
অষ্টমত:
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে একুশ এবং ছেলেদের
ক্ষেত্রে পঁচিশ। বিধি ভঙ্গ কোনমতেই গ্রাহ্য হবে না ।
নবমত :
সমাজে জাতিগত ক্ষেত্রে কেউ ছোট বা বড় বলে বিবেচিত হবে না । সকলেই সমান। তবে মেধার
বিচারে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকতে পারে। অর্থনৈতিক দিক থেকে কেউ এগিয়ে বা
পিছিয়ে থাকতে পারে। সংস্কৃতির বিচারে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকতে পারে।
এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে আছে তাদের এগিয়ে
আনার ব্যবস্থা থাকবে ।
দশমত: সমাজে
অর্থনৈতিক তছরূপ, নির্যাতন বা দমন-পীড়নের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে এবং তা জনতার বিচারে প্রমাণিত হলে
দেশের সংবিধান সেক্ষেত্রে উপযুক্ত শাস্তি দেবে ।
এরপর দেশমাতা জনতার উদ্দেশ্যে
বার্তা দিলেন, “প্রিয় দেশবাসীগন শীঘ্রই আমাদের দেশে ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কমে আসবে ।
ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি
চিরতরে বন্ধ হবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই যোগ্য সম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে দিন
যাপন করবে। চুরি ডাকাতির মতো সমস্ত কুবৃত্তি বিলুপ্ত হবে। পণ-প্রথা বন্ধ হবে ।
সমস্ত কর্মের মান হবে সমান ; যেমন, একজন ডাক্তার এবং একজন চাষী সমাজে দুজনেরই অবদান সমান। ফলে
সকলেই একই উপযুক্ত সম্মান পাবে। এভাবে আমাদের দেশ পরিণত হবে অপার সুখ ও শান্তির
দেশে ।
তারপর একের পর এক দিন পার হতে
লাগল। কী ব্যস্ততা আর বিপুল আয়োজন! এ দেশে সরকারি
নিয়ন্ত্রণে ক্ষুদ্র,মাঝারি, বৃহৎ
শিল্পে জোয়ার বইতে লাগলো। কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ঘটানোর লক্ষ্যে চাষিরা জমিতে
ঝাঁপিয়ে পড়ল। শিক্ষায় বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে সরকারের উদাত্ত আহ্বানে
শিক্ষাবিদরা এগিয়ে এলেন। শিল্পকলা সৃষ্টি হতে লাগল উন্নত সংস্কৃতির আধারে ।
সকলেই মিষ্টভাষী। সবাই সবার
পাশে দাঁড়াতে কী আপ্রাণ চেষ্টা! নারী-পুরুষ সকলের পোশাকে বিদ্যমান সৌন্দর্য ও
রুচিশীলতা । কোথাও নগ্নতার ছোঁয়া নেই। আধুনিকতার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ তাঁরাই তৈরি
করেছে।
এখানে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই
চলছে নিরন্তর । যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের সহযোগিতা চোখে পড়ার মতো। তবে
দয়া-ভিক্ষা নিয়ে সরকারের এগিয়ে আসার প্রয়োজন পড়ছে না। কেননা, রোজগারহীন কোন পরিবার নেই । তাছাড়া সরকার মনে করে
ভিক্ষা-দানের মধ্যে প্রভু-ভৃত্যের এক নিগুর সম্পর্ক লুকিয়ে থাকে। কিন্তু শ্রমের দ্বারা রোজগারের মধ্যে থাকে
গৌরব।
পথে কোনো ক্ষুধায় কাতর
অর্ধনগ্ন শিশু থালা হাতে দাঁড়িয়ে নেই। হিংসা-বিদ্বেষ, রক্তপাত নেই বরং স্বেচ্ছায় রক্তহীনেরে রক্ত দিতে এগিয়ে
আসে। পরমাত্মীয়তার এমন বন্ধন এর আগে আর কখনও দেখিনি।
ধর্ম এখানে
মানবধর্ম, সেবার ধর্ম। আর কর্মই জীবনের আসল ধর্ম। সবল এখানে দুর্বলকে দমন-পীড়ন করে না বরং প্রেমের ছোঁয়ায় কাছে
টেনে নেয়। মানুষকে দেখে দেখে পথচারী পশুরাও অচেনা কাউকে দেখলে কোমল দৃষ্টিতে
তাকায় আর লেজ নাড়ায়। হিংস্রতা ওদের রক্ত থেকে ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেছে। বনের
বাঘ,সিংহরা উপযুক্ত খাবার পেয়ে ভুলে গেছে মানুষের রক্তের স্বাদ।
পাখিরা অবকাশে দূষণমুক্ত নীলাকাশে উড়ে বেড়ায়।
বিজ্ঞান এখানে চির
আশীর্বাদের। কেননা, এখানে গোলা-বারুদ, বোমা তৈরি হয়না। পরমাণুর শক্তিকে কাজে লাগানো হয় মানব কল্যাণে, কৃষিতে, শিল্পে, নানা উৎপাদনে। এসমাজে পুলিশের প্রয়োজন হয়না। জনতা
শৃঙ্খলাপরায়ন। প্রতিহিংসা, পরশ্রীকাতরতা, হৃদয়হীনতা, পাশবিকতা
প্রভৃতির উপাদান মনে স্থান লাভ করতে পারে না। যুদ্ধে, সীমানা রক্ষায় মিলিটারির প্রয়োজন হয় না। কারণ, এদেশের কোন শত্রু নেই। তবু যদি কেউ জমি দখল করতে আসে তাঁর
অন্তর্জগৎ বদলে যায় । মনুষ্যত্বের পরশে অমানুষও মানুষ হয়ে যায়। বন্দুকের
বুলেটগুলো ফুলের মালা হয়ে তাঁর গলায় দোলে।
এতসব গল্প শুনতে শুনতে মন ভরে
গেল। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরতে ঘুরতে ইতিমধ্যে অনেক বছর কেটে গেছে। এমন সময় ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। সুন্দর স্বপ্নটা কেটে গেল। পুনরায় কঠিন ও
কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হলাম। আজইতো নারকীয় হিংসা, বেকারত্বের যন্ত্রণায় আত্মহত্যা,নারীর সতীত্ব লুন্ঠনের খবর শুনে অস্বস্তির ঘুমে ডুবে
গিয়েছিলাম। ওই স্বপ্নের দেশ আমাকে স্বস্তি দিয়েছিল। এখন ভাবছি, এ আমরা কোন দেশে, কোন সমাজে বাস করছি? আমরা
কি পারি না ওই স্বপ্নের দেশকে বাস্তবে রূপ দিতে?