(শিশু নাটিকা)
মূল বিষয়বস্তু:
করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর রোগের কারণে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এক
প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝে অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় । ছোট ছোট পড়ুয়াদের মন
ভারাক্রান্ত। প্রজাতন্ত্র দিবসে ভোরবেলা তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে বিদ্যালয়ের
সামনের প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়াবে জাতীয় পতাকা হাতে। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর শুরু
হবে ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ। ওদের চোখের জলে সিক্ত হবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
অবশেষে স্নেহময়ী এক শিক্ষিকার প্রেরণায় সকলে উদ্ভাসিত হবে করোনামুক্ত পৃথিবী এবং বিদ্যালয় খোলার আশায় ।
চরিত্র: চারজন পড়ুয়া – কাকলি, কণিকা, মল্লিকা, সুরেশ
এবং একজন শিক্ষিকা ।
: দৃশ্য আরম্ভ :
(করুন সুর বেজে উঠবে , চার
সহপাঠী মিলিতভাবে ধীর পদে এসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে করবে। একে একে ফুল নিয়ে
হাতজোড় করে মনের কথা বলে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে ।)
কাকলি : হে ভারতমাতা, মাগো, আজ ২৬ শে জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র
দিবস। ।
কনিকা : তোমার বুকে আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলাম।
মল্লিকা : মাগো, তুমি ভালো থেকো।
সুরেশ : তুমি আমাদের আশীর্বাদ করো ।
(এবার শৃঙ্খলা আকারে দাঁড়িয়ে মনের দুঃখে জাতীয়
পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং একে অপরকে মনের কথা প্রকাশ করবে ।)
কাকলি : কতদিন ধরে আমাদের স্কুলটা বন্ধ!
কনিকা : কেউ আর এখানে পড়তে আসে না।
মল্লিকা : ইস! জঙ্গলে চারপাশটা ভরে গেছে।
সুরেশ : কত আনন্দ, হইচই হত ।
কাকলি : আমরা একসাথে খেলতাম।
কনিকা : মন দিয়ে লেখাপড়া করতাম ।
মল্লিকা : স্যার, দিদিভাইরা কতকিছু
শেখাতেন।
সুরেশ : বকতেন, আবার ভালোবাসতেন ।
কাকলি : এখন সবকিছুই বন্ধ ।
কনিকা : বাড়িতেও আমাদের পড়াশুনা হয় না ।
মল্লিকা : হবে কী করে কনিকা? আমরা যে গরিব
।
সুরেশ : তুই ঠিকই বলেছিস মল্লিক। বাড়িতে আমাদের টিভি নেই, বড় মোবাইল-ফোনও নেই ।
কাকলি : টাকার অভাবে আমরা প্রাইভেট পড়তেও পারি না ।
কনিকা : কাকলি, তবে কি আমরা আর
কোনদিন লেখাপড়া করতে পারবোনা?
কাকলি : জানিনারে, আমি জানিনা কনিকা ।
(সকলে ভারাক্রান্ত মনে দূরের পানে চেয়ে থাকবে। করুন
সুরে কেঁদে উঠবে প্রকৃতি। এই দৃশ্য দেখে শিক্ষিকা প্রবেশ করবেন।)
শিক্ষিকা : আমার
প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের সব কথা আমি শুনেছি।তোমরা
দুঃখ করো না। এই“করোনা” একদিন ঠিকই চলে যাবে। তোমরা আবার লেখাপড়া করতে পারবে ।
কনিকা : দিদিভাই, আপনার কথা যেন সত্যি
হয় ।
শিক্ষিকা : বন্ধুরা, পৃথিবীতে এমন মহামারী
এর আগেও এসেছে। চলেও গেছে। জীবনযুদ্ধে আজও আমরা জয়ী হবো ।
কাকলি : দিদিভাই, শুনেছি আমাদের করোনার
টিকা দেওয়া হবে ।
মল্লিকা : হ্যাঁ দিদিভাই, কবে দেওয়া
হবে?
সুরেশ : কবে দেওয়া হবে দিদিভাই?
শিক্ষিকা : টিকা এসে গেলেই দেওয়া হবে। শোনো তবে, এখন ভীষণ জরুরী হল সকলের মাস্ক পরা আর সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধোয়া।
এছাড়া আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত: দুগজ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ।
কাকলি : আচ্ছা দিদিভাই, দুগজ দূরত্ব বজায়
রাখতে হবে কেন?
শিক্ষিকা : যাতে আমাদের কথা বলার সময় এবং
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে ।
কনিকা : কিন্তু আমাদের কাছে তো মাস্ক……. ।
শিক্ষিকা : না না, তোমাদের জন্য আমি
মাস্ক নিয়ে এসেছি। এই নাও, সকলে পরে নাও।
(সকলে খুশিমনে মাস্ক পরবে ।)
শিক্ষিকা : বন্ধুরা, তোমরা খুশি তো?
সকলে : হ্যাঁ —-।
শিক্ষিকা : তাহলে তোমাদের যে গানটি শিখিয়েছিলাম, এসো, আমরা সকলে মিলে শুরু করি সেই গান ।
(সকলে মিলে (শিক্ষিকাসহ) আনন্দে হাততালি দিতে দিতে
“আমরা করবো জয়” গানটি করবে এবং পতাকাকে কেন্দ্র করে ঘুরে ঘুরে নাচতে
থাকবে ।)
” আমরা করব জয়, আমরা করব জয়,
আমরা করব জয় নিশ্চয় ।আহা বুকের গভীর আছে প্রত্যয়,
আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয়,
আমরা করব…………….. । “
(গান শেষে সকলে হাত জোড় করে দাঁড়াবে। নেপথ্যে বেজে
উঠবে আশায়ভরা মধুর সুর।)
: সমাপ্ত :
……………………………………………………………………………………………………..