![]() |
(নাটক) -তৃষিত মরু |
তৃষিত মরু
– হরবিলাস সরকার
: প্রথম দৃশ্য:
(
জীবিকাহীন অগণিত ক্ষুধিত
মানুষের মিছিল এখন বাংলার নীলাকাশতলে। তবু ওরা স্বপ্ন দেখে, আশায় ঘর বাঁধে। তেমনই মা, ছেলে
(ময়ূখ), মেয়ে (মালা)কে নিয়ে তিনজনের এক পরিবার, যাদের স্বপ্নগুলো এখনও মরে যায় নি। মেয়ে বারান্দার এক
কোণে বসে রান্না করছে। ছেলে পড়াশোনায় মন বসানোর চেষ্টা করেছিল, পারেনি। পুরানো জীর্ণ টেবিলটার উপর খোলা বইটা বন্ধ করে
রেখে দিল। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে কীসব ভাবতে লাগলো)
মালাঃ
(উঠে এসে) দাদা, বই রেখে দিলি কেন? কাল থেকে যে পরীক্ষা।
ময়ূখঃ
পড়াশুনায় মন বসছে না। কাল থেকে তো তোরও পরীক্ষা, বোন।
মালাঃ
পরীক্ষা আমার দেওয়া হবে না রে। মায়ের শরীর ভালো না। কতদিন স্কুলে যাইনি।
পড়াশোনাও করতে পারিনি। তুই পরীক্ষাটা দে দাদা।
ময়ূখঃ
না রে, পরীক্ষা আমারও দেওয়া হবে না। আমিও যে কতদিন স্কুলে
যাইনি। কিচ্ছু মনে নেই। কী লিখবো পরীক্ষার খাতায়?
মালাঃ
তবুও তুই পরীক্ষা দে। নিশ্চয় পাস করে যাবি।
ময়ূখঃ
বোন রে, পাস করার থেকেও আমার বড় চিন্তা – আজ কাজে না
গেলে কাল কী খাবো! মায়ের ওষুধ কী দিয়ে কিনবো?
মালাঃ
শোন্ দাদা, আমি নাহয় বিড়ি বাঁধবো। তাতেও যদি না কুলায়
অন্য কিছু করবো। তুই যে আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই বলছি – তুই পরীক্ষাটা দে।
ময়ূখঃ
বোনের রোজগারে দাদা খাবে। এর চেয়ে লজ্জা আর কী হতে পারে? অমন কথা আর কখনও মুখে আনিস না।
(বুক চেপে ধরে কাশতে কাশতে মায়ের প্রবেশ)
মাঃ
কী রে ! মালা, ময়ূখ দুই দাদা-বোনে কী এত কথা
কাটাকাটি করছিস্? রান্না হলো রে ?
মালাঃ
হয়ে এসছে প্রায়। তুমি আবার উঠে এলে কেন,
মা?
মাঃ
জ্বরটা বোধ হয় গা থেকে নামলো। আজ একটু ভালো লাগছে। তুই যা, বই নিয়ে বস্। বাকিটা আমি করে নিচ্ছি।
ময়ূখঃ
(মায়ের কপালে হাত দিয়ে) “ এ কী মা?
জ্বরটা নামলেও পুরোপুরি এখনও
সারেনি। জ্বর আবার ফিরেও আসতে পারে।
মাঃ
ওষুধ খেয়েছি, জ্বর আর বাড়বে না। কাল থেকে তোদের বছরের
ফাইনাল পরীক্ষা। যা বাবা,
তুইও বই নিয়ে পড়তে বস্।
ময়ূখঃ
মা, কথা ব‘লোনা। তোমার শরীর এখনও সুস্থ হয়নি।
মালাঃ
হ্যাঁ মা, তোমার শরীর এখনও দুর্বল। তোমাকে আমি রান্না
করতে দেবো না। চলো, তুমি ভিতরে চলো। শুয়ে পড়বে। (জোর করে নিয়ে
যাবার চেষ্টা)
( প্রধান শিক্ষক একজন সহ: শিক্ষিকাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছেন।
দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকছেন)
সহ:শিক্ষিকাঃ
ময়ূখ, মালা,
তোমরা বাড়ি আছো?
প্র:শিক্ষকঃ
কোথায় ময়ূখ,মালা?
এদিকে এসো। দেখো – কারা
এসেছে।
মাঃ
দেখ্ তো মা, কারা যেন ডাকছে।
মালাঃ
(তাকিয়ে দেখে) মা, হেড স্যার আর বাংলা দিদিমণি এসছেন।
ময়ূখঃ
(এগিয়ে গিয়ে) স্যার, দিদিমণি?
আসুন, ভেতরে আসুন।
(ভেতরে এসে মায়ের সাথে নমস্কার বিনিময় হবে)
প্র:শিক্ষকঃ
(মায়ের প্রতি) দেখুন, আমরা আজ গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েছি।
তেমনি আপনার বাড়িতেও এসেছি। ময়ুখ,
মালা বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলে
যাচ্ছে না, তাই আমাদের আসতে হল। সামনের বছরটা ওদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
মালার মাধ্যমিক, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। আবার ময়ূখের উচ্চ
মাধ্যমিক, জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা। নিয়মিত স্কুলে
না গেলে ওরা পিছিয়ে পড়বে। কাল থেকে তো নবম,
একাদশ শ্রেণির বার্ষিক
পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে।
মাঃ
আপনারা এসেছেন, ভালই করেছেন। আসলে আমি একটু অসুস্থ হয়ে
পড়েছি। বুঝতেই তো পারছেন,
গরিবের ঘর। একটা দিন কাজে না
গেলে আখায় হাঁড়ি চাপে না। মেয়েটা বাধ্য হয়ে ঘর সামলাচ্ছে। ছেলেটা রাজমিস্ত্রি
কাজ করছে।
সহ:
শিক্ষিকাঃ আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারছি। ওদের বাবা নেই। আপনিই ওদের মাথার উপরের
একমাত্র ছাতা। জানি, জীবনে আপনার শত দুঃখ আছে, নিদারুণ যন্ত্রণা আছে। তবুও ছেলেমেয়েদের মঙ্গলের জন্য
হয়তো আপনাকে আরও অনেক দুঃখ-ব্যথা সইতে হবে।
মাঃ
দিদিমণি, দুঃখে ভরা আমার জীবন। আরও সহস্র দুঃখ-ব্যথা
সইতে আমি রাজি আছি যদি ওদের মঙ্গল হয়। আমি শুনেছি – কাল থেকে ওদের বছরের শেষ পরীক্ষা। ওরা নিশ্চয়
পরীক্ষা দিতে যাবে।
প্র:শিক্ষকঃ
বেশ ভালো লাগলো। এইটুকুই শুনতে এসেছিলাম। (চলে যেতে উদ্যত)
মাঃ
আমি ভীষণ লজ্জিত। আপনারা খালি মুখে চলে যাচ্ছেন। একটু চাও দিতে পারলাম না।
প্র:শিক্ষকঃ
না, না। চা এখন খাবো না। আপনি মন খারাপ করবেন না।
ওরা বড় পরীক্ষায় পাস করবে যেদিন,
সেদিন এসে চা খেয়ে যাবো।
মাঃ
তাই হোক। সেই দিন যেন আমার জীবনে আসে। আমি পথ চেয়ে বসে থাকবো।
সহ:শিক্ষিকাঃ
মালা, ময়ূখ,
আমার কাছে এসো। (ব্যাগ থেকে
একটা বিস্কুটের প্যাকেট বের করে) নাও,
এটা তোমাদের জন্য। আর কাল
থেকে স্কুলে এসো পরীক্ষা দিতে,
কেমন? তার জন্য ভালো করে আজ একটু প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
মালাঃ
আপনারা আশীর্বাদ করুন, আমরা যেন সফল হতে পারি। (প্রণাম করবে)
ময়ূখঃ
আপনাদের আশীর্বাদে আমরা অবশ্যই সব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবো। (প্রণাম করবে)
প্র:শিক্ষকঃ
তোমাদের প্রতি আমাদের আশীর্বাদ সব সময়ের জন্য।
সহ:শিক্ষিকাঃ
অনেক বড় হও, এই কামনা করি। দুঃখ-ব্যাথায় যখন কাতর হবে, মনে মনে বলবে – বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়। (মালার মাথায় হাত বুলাতে
বুলাতে)
প্র:শিক্ষকঃ
দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিতে নাইবা দিলে সান্তনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
(ময়ূখের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)
সহ:শিক্ষিকাঃ
বেশ, ভালো থেকো তোমরা। আমরা আসি। (দুজনের প্রস্থান)
মালাঃ
দাদা, তোর মনে আছে? আজ
থেকে পাঁচ বছর আগে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সে
বছর নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তুই আর আমি একসাথে এই গানটা গেয়েছিলাম।
ময়ূখঃ
মনে আছে। বাবা তখন বেঁচে ছিল। এতটা দুর্দিনের মুখোমুখি তখনও আমরা হইনি। আজ সেই
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
মাঃ
স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ বেঁচে থাকে। ছোটবেলায় আমিও গাইতাম। (গাইতে শুরু করবে)
“
বিপদে মোরে রক্ষা
করো…………..।”
(মা সুর ধরার পর তিনজনে একসাথে গাইবে। গান শেষে
মঞ্চের আলো নিভে যাবে)
: দ্বিতীয় দৃশ্য:
(পরিবার কল্যাণ সমিতির অফিস। ভেতরে বসে আছেন
দুজন মহিলা আধিকারিক। সেখানে উপস্থিত আছেন বি.ডি.ও সাহেব। একদিন মা গান গেয়ে
ভিক্ষা করতে করতে ঢুকে পড়েছেন অফিসের মধ্যে।)
(মাধবী)মহিলা আধিকারিকঃ বি.ডি.ও সাহেব, আজ
বড় ক্লান্ত লাগছে। এক দিনে চার-চারটে কেস। বধূ-নির্যাতন, বিবাহ-বিচ্ছেদ,
আত্মহত্যা, নাবালিকা বিয়ে।
বি.ডি.ওঃ
কী করবেন বলুন, খবর পাওয়া মাত্র আমিও ছুটে যাচ্ছি। এটা যে
আমাদের কর্তব্য।
(কাকলি)মহিলা আধিকারিকঃ
মাধবীদি, একটু জিরিয়ে নাও। এক্ষুনি খবর এলে আবার ছুটতে
হবে। কী শহর, কী গ্রাম, সর্বত্র
একই অবস্থা। বি.ডি.ও সাহেব,
বলুনতো – সমাজটা কোন্ দিকে এগোচ্ছে?
বি.ডি.ওঃ
দেখুন, তীব্র সামাজিক সংকট, অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আমরা চলেছি। কখন যে কী ঘটবে, তার কি ঠিক আছে?
হ্যাঁ একটা চরম সর্বনাশা
পথেই সমাজটা এগিয়ে চলেছে।
মাধবীঃ
সমাজটা সর্বনাশা পথে এমনি এমনি এগিয়ে যাচ্ছেনা। বি.ডি.ও সাহেব, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কাকলিঃ
হ্যাঁ দিদি, আমিও সেকথাই বলতে চাইছি। মেয়েদের কথা ভাবো।
মেয়েরা এখন বিক্রয়জাত পণ্য। বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। খদ্দের আসছে, নাড়াচাড়া করে দেখছে। ইচ্ছে হলে কিনছে, ইচ্ছে ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।
বি.ডি.ওঃ
তবে সরকারি দপ্তরে বসে এসব কথা আমরা বলতে পারি না। যদিও আপনাদের সাথে আমি সম্পূর্ণ
একমত।
মাধবীঃ না সাহেব,
একটু বলতে দিন। আমরা তো
মানুষ। আমাদের ঘরেও ছেলেমেয়ে আছে। কাকলি,
আসল কথা কী, জানিস্?
মেয়েরা তো আজ নিজেদের
আধুনিক বলে দাবি করছে। হ্যাঁ তারা আজ অনেকটাই শৃঙ্খলমুক্ত। কিন্তু আধুনিক হতে
গিয়ে তারা যে আসলে বিপথে চালিত হচ্ছে,
তা তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে
না, বুঝতেও চাইছে না। তাদের বাইরের চাকচিক্য
খদ্দেরের কাছে লোভনীয় করে তুলছে। চারপাশে সৌন্দর্যের নামে নগ্নতার ছড়াছড়ি। এটাই
নাকি আধুনিকতা।
কাকলিঃ দিদি,
বিপদ তো সেই জায়গাতেই।
ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সেই বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে। সেই বন্ধন বড় নড়বড়ে। মেয়েরা
নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি প্রাণটাও খোয়াতে হচ্ছে।
মাধবীঃ
নাবালিকা বিয়ে যত বাড়ছে,
বধূ-নির্যাতন, বিবাহ-বিচ্ছেদ তত বাড়ছে। এ যে কত বেদনাদায়ক! প্রত্যেক
মা-বাবাকেই আরও বেশি করে বোঝাতে হবে।
কাকলিঃ
বোঝাতে তো আমরা কম কিছু করছি না। তবু বোঝাতে পারছি কই?
মাধবীঃ
ওই যে তুই বললি না – নাবালিকা মেয়েরা বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে। এটা যেমন ঠিক, আবার গরিব বাবা-মা মেয়েকে মাথার বোঝা মনে করছে। যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব তা নামিয়ে মুক্ত হতে চাইছে। কেউ কেউ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার
কারণেও এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। এসবের বিহিত না করতে পারলে নাবালিকা বিয়ে
আটকানো যাবে না।
(বৈরাগ্য বেশ,
কাঁধে পুটুলি, দোতারা হাতে গান গাইতে গাইতে মায়ের প্রবেশ)
বি.ডি.ওঃ
ও বাবা! মহিলা যে অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
মাঃ
(লোকসংগীত গাইছে) “…………”। (গান শেষে) দিদিরা, এই মন্দভাগিনীকে কিছু ভিক্ষা দেবেন।
কাকলিঃ
তুমি কে গো? তোমার বাড়ি কোথায়?
মাঃ
আমি বড় মন্দভাগিনী, এক বিধবা মা। বাড়ি আমার রাধানগর গ্রামে। (বুক
চেপে ধরে কাশবে)
মাধবীঃ
দেখে তো মনে হচ্ছে – তোমার শরীর খারাপ। তা এই ভিক্ষা করেই খাও?
মাঃ
হ্যাঁ দিদি। আগে তো অনেক কিছুই করেছি। জমিতে মুনিশ খেটেছি। ইটভাটায় কাজ করেছি। আর
পারিনা। শরীরে অসুখ ধরেছে। এখন ভিক্ষাই করি।
কাকলিঃ
সরকারি সাহায্য পাও না?
মাঃ
মিথ্যা বলবো না দিদি, পাই। মাসে মাসে হাজার টাকা করে পাই। রেশনে
চাল-গমও পাই। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলে না। নিত্যদিন জিনিসের দাম বাড়ছে।
ঘরে আমার বড় ছেলে, বড় মেয়ে আছে। ছেলের এগারো ক্লাসের, মেয়ের নয় ক্লাসের শেষ পরীক্ষা চলছে। পড়াশুনার খরচ, কাপড়-চোপড়ের খরচ,
ওষুধ-পথ্য, খরচের কি শেষ আছে?
মাধবীঃ
এই নাও। (একটা দশ টাকার নোট হাত বাড়িয়ে দেবে) দুজনে মিলে দশ টাকা দিচ্ছি।
বি.ডি.ওঃ
এটা রাখো, আমার পক্ষ থেকে। (একটা দশ টাকার নোট দেবে)
তোমার গান আমার মন ছুঁয়ে গেছে।
মাঃ
(টাকা নিয়ে) আপনাদের মঙ্গল হোক।
কাকলিঃ
শোনো দিদি, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করো না। যতদূর
পর্যন্ত পড়তে চায়, পড়ুক।
মাধবীঃ
আর আমি তোমাকে বলছি – মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত ওর বিয়ের কথা কখনোই ভাববে
না।
বি.ডি.ওঃ
সবচেয়ে বড় কথা তোমার মেয়ে একটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন পাবে।
মাঃ
আপনাদের মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক। আশীর্বাদ করুন, আমি
যেন মায়ের কর্তব্য পালন করতে পারি। তবে কী দিদি, জানিনা, জীবনের এই ঘূর্ণিপাকে আর কতকাল আমাকে ভাঙা তরী বাইতে হবে!
( সংগীতঃ “জীবন নদীর
ঘুর্ণি পাকে আর কতকাল বাইবি খেয়া মন।” গাইতে গাইতে চলে যাবে)
বি.ডি.ওঃ
বেশ, আমি উঠছি। আপনারা আপনাদের কাজ করুন। সমস্যা হলে ডাকবেন।
কাকলিঃ
দিদি, এবার আমরাও চলো। মাধবীঃ (মোবাইল দেখছিল) চল্, মুকুন্দপুর হয়ে যাবো । মোবাইলে এইমাত্র মেসেজ ঢুকলো। সদ্য
বিবাহিতা নাবালিকা গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা।
কাকলিঃ
ইস! কবে যে বন্ধ হবে এই অপমৃত্যুর মিছিল।
(দুজনের প্রস্থান)
: তৃতীয় দৃশ্য:
(মালা নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণীতে
উঠেছে। মায়ের অবস্থা ভালো নয়,
দু:শ্চিন্তায় হৃদযন্ত্রে
অসুখ বাসা বেঁধেছে। দাদা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেও লেখাপড়ার পাট একেবারে চুকিয়ে
সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। এমনই একদিন এক বিকেলে কথা উঠল মালার বিয়ের
ব্যাপারে। তার হৃদয়তন্ত্রীর তারে বিষাদের সুর। নিদারুণ যন্ত্রণা সে সইতে পারে
না।)
ময়ূখঃ
(এক পড়ন্তবেলায় তার বইপত্রগুলো গুছিয়ে বেঁধে রাখল। ছাত্রজীবনকে চিরবিদায়
জানালো চোখের জলে।)
মাঃ
(অসুস্থ, বিছানায় শুয়েছিল। ছেলের ভেতরের যন্ত্রণা
অনুভব করে উঠে বসল।) কী রে,
বইপত্রগুলো বেঁধে রাখলি কেন?
ময়ূখঃ মা,
তুমি আবার উঠে বসলে কেন? তোমার শরীর খারাপ।
মাঃ
তবু তো আমাকে উঠে বসতে হল। তুই আমার ছেলে,
তোর মনের কথা যে আমি বুঝতে
পারি। গরিবের ভাগ্য বড় নির্দয়,
নিষ্ঠুর।
ময়ূখঃ
ভাগ্য নয় মা, এটাই সমাজের নিয়ম। যার সামর্থ্য আছে, লেখাপড়া তারই হবে।
থাক্ না মা, এসব নিয়ে ভেবে তোমার শরীর খারাপ ক‘রো না। আমি তো ভালোই আছি। আমার মনে কোনো কষ্ট নেই।
মাঃ
মায়ের পরাণ, তুই ‘না‘
বললেই কি ভেবেছিস্ – সে কিছু
বুঝতে পারে না?
( স্কুল থেকে মালা ফিরে এলো)
মালাঃ
দাদা, তুই আজ কাজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিস্? তুই তো আমার পরে আসিস।
ময়ূখঃ
কাজ আজ হয়নি রে। রাজমিস্ত্রির লেবারের কাজ,
প্রতিদিন তো আর হবে না। সে
যাই হোক, তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
মালাঃ
একি দাদা, বইপত্র গুছিয়ে বেঁধে রেখেছিস্ কেন?
মাঃ
মা রে, চিরদিনের মতো ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল।
মালাঃ
মা, তুমি টেনশন ক‘রো
না। দাদা, মা এসব কী বলছে?
ময়ূখঃ
বোন, সংসারের অবস্থাতো তুই জানিস। তাছাড়া ভেবে
দেখলাম, টাকার অভাবে বই কিনতে পারি না। টিউশন
পড়তে পারি না। নিয়মিত স্কুলে যেতে পারি
না। এগারো ক্লাসে কোনো রকমে পাশ করে বারো ক্লাসে উঠেছি। এইভাবে পাশ করে কোনদিন
চাকরি পাব না। আবার আমাদের টাকার জোরও নেই যে, হাত
পাতলেই একটা চাকরি জুটে যাবে। যদিও সে অধর্মের কথা আমি ভাবতেও পারি না।
মালাঃ
দাদা, সে অধর্মের কথা না বলাই ভালো। আর চাকরি নাইবা
পেলি, তবু তো জীবনে পড়াশোনাটা দরকার। না দাদা, সংসারের বোঝা তুই একা কেন কাঁধে নিবি? আমিও কাল থেকে বিড়ি বাঁধবো, স্কুলেও
যাবো।
মাঃ
মা আমার, শোন্ আমার কথা। তোকে বিড়ি বাঁধতে হবে না।
আমার অবস্থা ভালো নয়। কখন যে কী হয়ে যাবে,
তার নিশ্চয়তা নেই। জানিনা, আর কোন্ দুর্দিন সামনে দাঁড়িয়ে আছে! তাই বাধ্য হয়ে
ভেবেছি – দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে ভিক্ষা
চেয়ে তোর বিয়েটা তাড়াতাড়িই দিয়ে দেবো। তোর ভালোই হবে মা।
মালাঃ
(হঠাৎ যেন এক বজ্রাঘাত এসে লাগল) মা,
আমি বুঝেছি – তোমাদের কাছে
আমি বোঝা হয়ে গেছি, তাই না?
দাদা, তোরও কি তাই মত?
(দাদা নীরব) বুঝেছি। তাই যদি হয়, তবে শোন্ দাদা,
শোনো মা, বোঝা তোমাদের বইতে হবে না। যেদিকে চোখ যায় আমি চলে
যাচ্ছি। (স্কুলের পোশাকেই ছুটে বাড়ি
ছেড়ে চলে যাবে)
ময়ূখঃ
বোন, যাস্ না।
মাঃ
মালা, মা রে,
যাস্ না, যাস্ না মা।
ময়ূখঃ
যাস্ না রে বোন,যাস্ না। এখনই কেন বলতে গেলে মা! সারাদিন পর বাড়ি
এলো, পেটে খিদে নিয়েই চলে গেল।
মাঃ
যা রে বাবা, যা,
ওকে ধরে নিয়ে আয়। মালা রে, মা যাস্ নে। (উঠে যেতে উদ্যত হয়)
ময়ূখঃ রাস্তা-ঘাট ভালো
নয়, কত বিপদ হতে পারে! মালা, বোন আমার ফিরে আয়,
ফিরে আয় বোন। (বোনকে
ফিরিয়ে আনতে ছুটে যাবে)
( মা-ও অসুস্থ শরীরে ধীরে ধীরে এগোতে থাকবে )
: চতুর্থ দৃশ্য:
(মালাকে খুঁজে না পেয়ে দুর্ভাবনার প্রহর গুনতে
গুনতে ফিরে এসেছে মা, দাদা। সারারাত বিনিদ্র রাত কাটে দাদা,মায়ের। পরদিন সকাল হল। বেলা বাড়তে লাগলো। অবশেষে মালা
ফিরে এলো, সাথে প্রধান শিক্ষক, সহ: শিক্ষিকা,
পরিবার কল্যাণ সমিতির
আধিকারিকগণ, বি.ডি.ও সাহেব।)
( মা বসে কাঁদছে। দাদা উদ্ভ্রান্তের মতো, দুশ্চিন্তায় মগ্ন)
ময়ূখঃ
মা, কত জায়গায় খুঁজে এলাম, কোথাও খোঁজ পেলাম না। কী করবো, বলোতো?
থানায় কি যাবো? একটা রাত পেরিয়ে গেল,
আর কি অপেক্ষা করা ঠিক হবে?
মাঃ
তুই আমাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করিস্ না। আমার মাথা ঠিক নেই। কপাল রে, কেন আমি ওকে বিয়ের কথা বলতে গেলাম! (কপাল চাপড়াবে) কেন
বলতে গেলাম!
ময়ূখঃ
মা, এমন ক‘রো না। তোমার যে শরীর খারাপ। এ অবস্থায় তোমার
একটা কিছু ঘটে গেলে আমি কেমন করে বাঁচবো? একটু
ধৈর্য ধরো মা।
মাঃ
বাবা রে, কেমন করে ধৈর্য ধরবো, বল্?
মেয়েটা সারারাত কোথায় থাকল!
কেমন থাকল! কী খেল! কিছুই জানি না।
ময়ূখঃ
মা, তুমি শান্ত হয়ে বসো। আমি নাহয় থানাতেই যাই।
সকাল থেকে তো কিছু মুখে দাও নি,
একটু চা করে দিই মা?
মাঃ
না বাবা, চা আমার গলা দিয়ে নামবে না। তুই বরং থানাতেই
যা।
(এমন সময় স্কুলের সহ:শিক্ষিকা মালাকে ধরে
নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। পেছনে প্রধান শিক্ষক,
পরিবার কল্যাণ সমিতির
আধিকারিকগণ, বি.ডি.ও সাহেব)
সহ:শিক্ষিকাঃ
এই যে মালার মা, মেয়েটা যদি কাল আমার বাড়িতে গিয়ে না উঠতো, বলুনতো কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যেত! ময়ুখ, তুমিও বলো,
যা ক্ষতি হতে পারতো, তা পূরণ করতে পারতে?
মাঃ
মা রে, (উঠে কাছে আসে) কেন রাগ করে চলে গেছিলি মা? মায়ের পরানে কত কু ডেকেছে, কত
কেঁদেছি মা, তুই বুঝবি না। (বুকে টেনে নিয়ে) মায়ের কোল
খালি করে আর তোকে যেতে দেব না। আর আমি কখনো তোর বিয়ের কথা বলবো না। কখনো এই
হতভাগিনীকে ছেড়ে যাস্ না মা।
ময়ূখঃ
তুই আমার ছোট বোন, কত আদরের। ওরে, আর
কখনো এমন করে চলে যাস্ না।
প্র:শিক্ষকঃ
মালার মা, আপনি যদি ওর বিয়ের কথা না বলতেন তবে তো
মেয়েটা রাগ করে চলে যেত না।
কাকলিঃ
আপনারা কল্পনা করতেও পারছেন না,
মেয়েটার কত বড় বিপদ ঘটতে
পারতো।
মাধবীঃ
আচ্ছা মালার মা,তুমি তো আমাদের অফিসে গেছিলে, মনে আছে?
কথা দিয়েছিলে – ছেলেমেয়েরা
যতদূর পড়তে চায়, পড়াবে। ওদের জীবন নষ্ট হতে দেবে না।
বি.ডি.ওঃ
হ্যাঁ, এনাদের অফিসে সেদিন আমিও ছিলাম। এ কথা তো আমার
সামনেই হয়েছে। তাহলে মালার মা,
তুমি কথা রাখলে না কেন? এত অল্প বয়সে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে তুমি ওর সুন্দর জীবনটা
নষ্ট করতে চাইছো কেন? এটা অন্যায়, অপরাধ।
তোমাকে আবার বলে যাচ্ছি – মেয়েটাকে একটা সুন্দর জীবন গড়তে দাও।
মাঃ
মহাশয়, মেয়েটা আমারই সন্তান, বড় আদরের,
বড় স্নেহের। মালা যেমন আমার
একমাত্র মেয়ে, তেমনি ময়ুখও আমার একমাত্র ছেলে। আমি ওদের
মুখপানে তাকিয়েই বেঁচে আছি। আমি ওদের সুন্দর জীবন কামনা না করে থাকতে পারি কি?
বি.ডি.ওঃ
তুমি মুখে এত সুন্দর সুন্দর কথা বলো,
তবে এই ঘটনাটা ঘটালে কেন?
কাকলিঃ আমারও একই কথা। তোমার মুখের কথার সাথে কাজের মিল
দেখতে পাচ্ছি না। তাতে কিন্তু তোমার মন্দ ছাড়া ভালো কিছু হবে না।
মাধবীঃ
দেখ, সংসারে অভাব, দুঃখ-যন্ত্রণা
আছে, স্বীকার করছি। তাই বলে ছেলেমেয়েকে তো আর দুঃখ-যন্ত্রণার
পথে ঠেলে দিতে পারি না।
প্র:শিক্ষকঃ
(মায়ের প্রতি) হ্যাঁ দিদি,
উনি কিন্তু ঠিকই বলেছেন। এই
যে ময়ূখ, সোনা,
তুমি স্কুলে যাচ্ছো না কেন?
ময়ূখঃ
স্যার, স্কুলে কেন যাচ্ছি না, ভেতরে আমার কী যে
দুঃখ, বলে বোঝাতে পারবো না। তবে শুধু এইটুকুই বলতে
পারি – আপনারা যেমন আমাদের ভালো কিছু দেখতে চান, আমার
মা-ও তেমনি সদা সর্বদা আমাদের মঙ্গল কামনা করেন।
সহ:শিক্ষিকাঃ
কিন্তু ময়ূখ, এই যে তুমি স্কুলে যাচ্ছো না, তোমার মা তোমার বোনকে সাবালিকা না হতেই বিয়ে দিতে চাইছেন,এতে কি তোমাদের মঙ্গল হবে?
মাঃ
দিদিমণি উত্তরটা আমি দিচ্ছি। আপনারা সকলেই যখন আমার পরিবারের মঙ্গলের কথা ভাবছেন, তখন এ প্রসঙ্গে আমি দু-একটি কথা বলতে চাই। আমি হার্টের
পেসেন্ট। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও বলছি। আমি লেখাপড়া বিশেষ কিছু শিখতে পারিনি।
আপনারা জ্ঞানী গুণী মানুষ। সমাজের মানুষের কথা ভাবেন। আজ আমার দুয়ারে এসেছেন। আমি
ধন্য হয়েছি। শুধু একটাই আবদার করব – সরকার আমাকে বা আমার ছেলেকে একটা কাজের
ব্যবস্থা করে দিক না, যাতে দু‘বেলা না হোক, অন্তত:
একবেলা দু‘মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারি।
বি.ডি.ওঃ
না না, এ অন্যায় আবদার। দেশে কোটি কোটি গরিব মানুষ।
সকলকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আমরা এখানে চাকরি বিলি করতে আসিনি। আমরা
আমাদের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। তাই তোমাকে বলে যাচ্ছি – তুমি সুন্দর জীবনকে
অসুন্দর করে তুলবে না। ব্যাস,এটাই আমার শেষ কথা।
(বি.ডি.ও সাহেব প্রস্থান করলেন। পেছন পেছন একে একে সকলেই
প্রস্থান করলেন।)
ময়ূখঃ
সবাই শুধু বাইরেটা দেখল, ভেতরটা কেউ বুঝল না মাগো।
মাঃ
তুই দুঃখ পাস্ না বাবা। নিত্য উপবাসিনীরে কে দেয় ক্ষুধার অন্ন! মা রে, (মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে) আমি বড় অন্যায় করে ফেলেছি। তুই
আমাকে ক্ষমা করে দিস্ মা।
মালাঃ
(অনুশোচনার অশ্রু) না মা,
তুমি কোনো অন্যায় করোনি।
করেছি আমি।তোমার ভেতরের দুঃখ,
যন্ত্রণা আমি অনুভব করতে
পেরেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। দাদা,
আমাকে ক্ষমা করে দে। না বুঝে
আমি একটা বড় ভুল করে ফেলেছি।
( দুঃখের অশ্রু-সাগরে সকলেই তলিয়ে যায়)
: পঞ্চম দৃশ্য:
(সমাজ ব্যবস্থার নির্মম কষাঘাত দারিদ্র-পীড়িত
মানুষের উপর। মায়ের অসুখ আরও বড় হয়েছে। অবশেষে মালার সব অহংকার ভেঙে চুরমার
হয়ে গেল।)
মালাঃ
(এক সকালে দাদার ঘরে এসে) দাদা,
কখন উঠলি ঘুম থেকে? ইস! কতটা বেলা হয়ে গেল।
ময়ূখঃ
আয় বোন। আজ তোর উঠতে অনেকটা দেরি হলো।
মালাঃ
হ্যাঁ দাদা, গোটা রাত ঘুম আসেনি চোখে। মা বুকের যন্ত্রণায়
ছটফট করছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ভোর রাতে একটু ঘুম ধরেছিল।
আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ময়ূখঃ
সারারাত আমিও ঘুমোতে পারিনি। মায়ের ঐ কান্না আর বুকের পাঁজরের শব্দে সুখের ঘুম কি
আর আসে রে? ( কাজে বেরোতে উদ্যত হবে)
মালাঃ
তুই কি কোথাও বেরোচ্ছিস?
ময়ূখঃ
হ্যাঁ, আমি কাজে যাচ্ছি। ফেরার সময় মায়ের ওষুধ কিনে
নিয়ে আসবো। শোন্, মা ঘুম থেকে উঠলে একটু চা করে দিস্। আর সময়
মতো তুই স্কুলে চলে যাস্। (রওনা হবে)
মালাঃ
দাদা, কিছু খেয়ে যা। দাদা -। দাদা আমার না খেয়ে
কাজে চলে গেল! কেন যে মরন-ঘুম ঘুমিয়েছিলাম। একটু জলখাবারও করে দিতে পারলাম না।
(ভাঙা দোতারা,
কাঁধে পুটুলি নিয়ে মায়ের
প্রবেশ)
মাঃ
মা, মা রে,
ময়ূখ তো কাজে চলে গেল। আমিও
বেরোচ্ছি। তুই সাবধানে স্কুলে যাস্।
মালাঃ না মা, তোমার
শরীর খারাপ। এই অবস্থায় আমি তোমাকে যেতে দেবো না।
মাঃ
আমার জন্য ভাবিস্ না। মরণ হলে কেউ আটকে রাখতে পারবেনা।
মালাঃ
এ তুমি কী বলছো মা? ওকথা মুখেও এনো না।
মাঃ শোন্ মা। ঘরে রেশনের চাল ক‘টাই আছে। তেল,
লবণটুকু পর্যন্ত বাড়ন্ত। কী
দিয়েইবা কিনবো! বাজারে সব জিনিসই আগুন। তার উপর সামনে তোর বড় পরীক্ষা। অনেকগুলো
টাকা লাগবে। মা রে, কোন্ মা,
বাবা না চায় – তার
ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে বড় হোক?
তবে কী মা, ভাগ্য আমার মন্দ।
(মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ধীরে ধীরে চলে যাবে ভিক্ষার
উদ্দেশ্যে)
মালাঃ মা,
মাগো, তুমি যেও না। যেওনা মা। মা আমার চলে গেল! (কান্নায় ভেঙে
পড়বে) হে আকাশ, হে বাতাস, বৃক্ষরাজি, বলো – আমি এখন কী
করবো? হে রত্নগর্ভা ‘বসুন্ধরা‘, তোমার এত বৈভব,
তবু কেন আজ আমার
মৃত্যুপথযাত্রী মাকে দু‘মুঠো খাবারের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা
চাইতে যেতে হল? হে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ, তোমরা সমাজ গড়েছো,
সভ্যতা গড়েছো, তবু কেন এই দুর্ভাগ্য, কেন
প্রতিদিন মৃত্যুকে ভালোবেসে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়? কে
আছো দরদি বন্ধু, হৃদয়ের আপনজন, অথৈ
সমুদ্রে ভেসে যাওয়া হতভাগিনী মালাকে বলে দাও পথের ঠিকানা। (অকূল দরিয়ার মাঝে
কাঁদে হতভাগিনী)
(নেপথ্যে সঙ্গীতঃ …………)
সমাপ্ত
……………………………………………………..